নিত্যনতুন বাহারি মেকআপ ট্রেন্ড নিয়ে কখনও ভেবে দেখেছেন? কীভাবে শুরু হল এ সব ট্রেন্ড? অনেক সময়ই এ সব ট্রেন্ডের সূত্রপাত হয় প্রকৃতির সৌন্দর্যের অনুপ্রেরণায়। ইনস্টাগ্রামে যখন চোখের পাতায় আইশ্যাডো প্যালেট দিয়ে তরমুজের মতো লাল টুকটুকে রঙ ফুটিয়ে তোলা শুরু হল, আমরা কেউই তেমন আশ্চর্য হইনি! আবার বহুদিন ধরে রূপচর্চার যে পদ্ধতি আমরা অনুসরণ করে আসছি, তা থেকেই জন্ম নেয় মেকআপের নতুন ট্রেন্ড। হয়তো তাতে একটু আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে, কিন্তু সূত্রটা লুকিয়ে থাকে সেই প্রাচীন যুগেই! বিশ্বাস করছেন না? আচ্ছা, বলুন তো স্মোকি আইজের উৎপত্তি হল কোথা থেকে? ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠার পর কাজল ধেবড়ানো চোখ থেকেই তো? সুনিশ্চিতভাবে বলার উপায় না থাকলেও কারণটা যে এমনই কিছু একটা হবে, সেটা নিশ্চিত হয়ে বলাই যায়! মেকআপ ট্রেন্ড অনেক সময় পপ কালচার থেকেও শুরু হতে পারে। সেরকমই একটি লুক হল আইব্রো স্লিট, অর্থাৎ চেরা ভুরু। এই ট্রেন্ডটি একটু আনইউজুয়াল বা অস্বাভাবিক, কিন্তু বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জেনে নিন এই অদ্ভুত ট্রেন্ড সম্পর্কে যাবতীয় খুঁটিনাটি।

 

1. কাকে বলে আইব্রো স্লিট?

1. কাকে বলে আইব্রো স্লিট?

ভুরুর রোম বরাবর সরু লম্বা করে কেটে দিলে তৈরি হবে আইব্রো স্লিট। পেশাদার বিউটিশিয়ান, পাড়ার পার্লারের দিদি আপনাকে আইব্রো স্লিট করে দিতে পারবেন। এমনকী স্থির হাত আর সাহস থাকলে নিজেও করে নেওয়া যায়। নয়ের দশকে এই স্টাইলটি তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল, হিপহপ শিল্পীদের প্রায়ই দেখা যেত স্লিটেড আইব্রোতে। আধুনিক বিউটি ব্লগারেরা এই ট্রেন্ডটিকে আবার ফিরিয়ে এনেছেন। উদ্ভট থেকে উদ্ভটতর মেকআপ ট্রেন্ড অনুসরণ করতেও তাঁরা পিছপা নন।

 

2. এই ট্রেন্ডের শুরু হল কীভাবে?

2. এই ট্রেন্ডের শুরু হল কীভাবে?

আইব্রো স্লিটের ইতিহাস বেশ খানিকটা অন্ধকারাচ্ছন্ন। ভুরুর রোমে স্বাভাবিকভাবে তখনই কাটা দেখা যায় যখন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কোনওরকম মারপিটে জড়িয়ে পড়েন আর ভুরুর জায়গাটায় কেটে যায়। এটি সাধারণত পুরনো ক্ষতর স্মৃতি, আগেকার দিনের গ্যাংস্টার ছবিতে অভিনেতারা এই লুক তৈরি করতে ভুরুর একটুখানি অংশ কামিয়ে রাখতেন। গেম অফ থ্রোনস-এর জেসুন মোমোয়া সম্প্রতি পুরনো ট্রেন্ডটি নতুন করে ফিরিয়ে এনেছেন। জেসনের নিজের ভুরু কাটা, যদিও সেটা নকল নয়। সত্যিকারের বার ফাইট করতে গিয়ে তিনি আহত হয়েছিলেন। একটা ত্রুটিকে কীভাবে সৌন্দর্যে পালটে দিতে হয়, আইব্রো স্লিট সে কথাই মনে করায়।

 

3. আইব্রো স্লিট ট্রেন্ড 1: আইব্রো স্লিট উইথ হেয়ারকাট জয়েনিং

3. আইব্রো স্লিট ট্রেন্ড 1: আইব্রো স্লিট উইথ হেয়ারকাট জয়েনিং

আইব্রো স্লিট নানাধরনের হতে পারে। আপনি কতটা ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত, তার ওপর নির্ভর করবে আপনার আইব্রো স্লিটের আকার আর ধরন। চুলের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার প্রথাটা বেশ অন্যরকম। বাজ, ক্রু বা ফেড কাটের চুলের সঙ্গে এই স্টাইল দারুণ মানায়। এই স্টাইলের মূল কথাটি হল, চুল আর ভুরু একই অ্যাঙ্গলে কাটা থাকবে। এরকম আরও অনেক স্টাইল আছে। পেশাদার হেয়ারস্টাইলিস্ট বা নাপিতকে দিয়ে এরকম কায়দা করিয়ে নিতে পারেন। ছবিসূত্র: পিন্টারেস্ট/Pinterest

 

4. আইব্রো স্লিট ট্রেন্ড 2: ডাবল স্লিট উইথ হেয়ারকাট

4. আইব্রো স্লিট ট্রেন্ড 2: ডাবল স্লিট উইথ হেয়ারকাট

এই কায়দাটি আগের চেয়ে একধাপ ওপরে। যাঁদের ব্যক্তিত্ব রয়েছে এবং হেয়ারস্টাইল নিয়ে ঝুঁকি নিতে জানেন, তাঁরা ট্রাই করতে পারেন। এই স্টাইলটি নিজে নিজে না করে পেশাদারের সাহায্য নেওয়াই ভালো, কারণ ব্যাপারটা খুব একটা সহজ নয়। পেশাদার স্টাইলিস্ট অনেক ভালোভাবে কাজটা করতে পারবেন। ছবিসূত্র: পিন্টারেস্ট/ Pinterest

 

5. আইব্রো স্লিট ট্রেন্ড 3: সিঙ্গল আইব্রো স্লিট

5. আইব্রো স্লিট ট্রেন্ড 3: সিঙ্গল আইব্রো স্লিট

একদম প্রাথমিক অথচ স্টাইলিশ, আর সেইসঙ্গে ছিমছাম পরিচ্ছন্ন। সিঙ্গল আইব্রো স্লিট ট্রেন্ড হিসেবে দারুণ কুল, এটি করাও তুলনামূলক সহজ। এই স্টাইলটিতে চোখের দিকে নজর চলে যায়, ফলে আই মেকআপ/ eye makeup নিয়ে নানা এক্সপেরিমেন্ট করার সুযোগ রয়েছে আপনার কাছে। আমাদের পরামর্শ শুনতে চান? রং দিয়ে ইচ্ছেমতো সাজিয়ে তুলুন চোখ। ছবিসূত্র: পিন্টারেস্ট/Pinterest

 

6. আইব্রো স্লিট ট্রেন্ড 4: ডাবল আইব্রো স্লিট

6. আইব্রো স্লিট ট্রেন্ড 4: ডাবল আইব্রো স্লিট

সিঙ্গল আইব্রো স্লিট ট্রেন্ডের মতোই ডাবল স্লিটও দারুণ আকর্ষণীয়। একইসঙ্গে আপনি যে ঝুঁকি নিতে পারেন, সেটাও বোঝা যায় এই স্টাইলের মধ্যে দিয়ে। ভুরুর আর্চ নিখুঁত করে মুখে একটা ধারালো লুক এনে দেয় এই স্টাইলটি। ট্রাই করে দেখুন! ছবিসূত্র: পিন্টারেস্ট/ Pinterest

 

7. আইব্রো স্লিট ট্রেন্ড 5: বিজুয়েলড আইব্রো স্লিট

7. আইব্রো স্লিট ট্রেন্ড 5: বিজুয়েলড আইব্রো স্লিট

আইব্রো স্লিটের স্টাইলে আরও একধাপ এগোতে চান? তা হলে বেছে নিন পিয়ার্সিং। দারুণ কুল আর ট্রেন্ডি দেখাবে, সময়ও লাগবে না তেমন। প্রথমে ভুরু স্লিট করে নিন, তারপর পিয়ার্স করুন। এবার পছন্দসই মিনি স্টাড পরে নিন। আর একটু সাহসী হতে ইচ্ছে করলে মিনি ড্যাঙ্গল বা হুপসও পরতে পারেন। ছবিসূত্র: পিন্টারেস্ট/Pinterest

 

8. কীভাবে করবেন আইব্রো স্লিট?

8. কীভাবে করবেন আইব্রো স্লিট?

আইব্রো স্লিট পার্মানেন্ট বা টেম্পোরারি হতে পারে, নির্ভর করছে আপনার কেমন পছন্দ। নিজে নিজে আইব্রো স্লিট করতে চাইলে হাতের কাছে রাখুন পাতলা ইলেকট্রিক শেভার আর খানিকটা টেপ। ভুরুর শেষভাগে খানিকটা অংশ বেছে একটু কোনাচে করে পরিষ্কার করে নিন। বেশি করবেন না, তাতে মনে হবে ভুরুর রোম উঠে গেছে। আবার কনসিলার দিয়েও/use a concealer স্লিটের এফেক্ট আনতে পারেন। প্রথমে ভুরু ভালো করে লাইনিং করে পাউডার দিয়ে ফিলিং করে নিন; স্পুলি দিয়ে ব্রাশ করুন। এবার কনসিলার দিয়ে ভুরুর শেষ প্রান্তে স্লিট বানিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে দিন। ফোটো তোলার জন্য এই কৌশলটি দারুণ কাজের, কিন্তু আসলে যে ব্যাপারটা নকল সেটা আপনার আশপাশের মানুষ বুঝতে পারবেন!

 

9. ভুরু কি নতুন করে গজায়?

9. ভুরু কি নতুন করে গজায়?

আইব্রো স্লিট করানোর ঝুঁকি নেবেন কিনা, তা নির্ভর করছে আপনার ভুরুর ধাতের সঙ্গে আপনি কতটা পরিচিত, তার ওপর। ভুরুর রোম পুরোপুরি গজাতে গড়ে সাধারণত মাসখানেকের চেয়ে একটু বেশি সময় লাগে। আমি নিজে যেমন কখনও আমার ভুরু নিয়ে এমন কিছু করব না; আমার ভুরু আমার কাছে অনেক সুন্দর আর দামি! তাই আপনি যদি পার্মানেন্ট আইব্রো স্লিট করাতে চান, হাজারবার ভেবেচিন্তে সাবধানে এগোন!

 

10. আইব্রো স্লিট ট্রেন্ড নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্ন

10. আইব্রো স্লিট ট্রেন্ড নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্ন


প্রশ্ন: কোনদিকের আইব্রো স্লিট করব?


উত্তর: যে কোনও দিকের ভুরুই স্লিট করতে পারেন। তবে যে ভুরুতে রোমের ঘনত্ব ভালো, সেটাই স্লিট করা উচিত। তাতে ব্যাপারটা পরিষ্কার বোঝা যাবে।

প্রশ্ন: আইব্রো স্লিট কি আকর্ষণীয়?


উত্তর: সঠিকভাবে করলে আইব্রো স্লিট দারুণ আকর্ষণীয় হতে পারে। কিন্তু একেবারে সুনিশ্চিত হয়ে তবেই রেজর হাতে নিন। না হলে কোনও পেশাদার স্টাইলিস্টের কাছ থেকে করিয়ে নিন।

প্রশ্ন: আইব্রো স্লিট করানোর পর ফের রোম গজাতে কতদিন লাগে?


উত্তর: স্বাভাবিক ভুরুর রোম/ eyebrow hair গজাতে যতদিন লাগার কথা, আইব্রো স্লিট নতুন করে ভরে যেতে ততদিন সময়ই লাগে। কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট তফাত রয়েছে। আপনি যদি ক্ষুর দিয়ে কামিয়ে থাকেন, তা হলে নতুন করে রোম গজাতে পনেরোদিন সময় লাগবে। আর যদি টুইজার দিয়ে রোম তুলে থাকেন, তা হলে রোম বেরোতে অনেক বেশিদিন সময় লাগবে। সে ক্ষেত্রে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসও লেগে যেতে পারে।