করোনা অতিমারির আবহে প্রায় তিনমাসের বেশি সময় ধরে চলতে থাকা এই লকডাউন আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলেছে নানাভাবে। গড়পড়তা ছকে বাঁধা জীবন যেমন ওলটপালট হয়ে গেছে এর ফলে, তেমনি আমাদের ত্বকেও নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে। নিউ নর্মালের চক্করে বাড়ির বাইরে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক পরার যে নিয়ম শুরু হয়েছে, তাতে ত্বকে ব্রণ ফুসকুড়ি, লালচেভাব, জ্বালা যেন নিয়মের মতো হয়ে গেছে! এই বাড়তি ঝামেলা সহ্য করা কি সহজ কথা?
ভাবছেন এমন কেন হচ্ছে? আসলে একটানা অনেকক্ষণ মাস্ক পরে থাকলে মুখের ঢাকা অংশের উষ্ণভাব আর আর্দ্রতা, দুটোই খুব বেড়ে যায়, মুখে ঘাম জমে আর তার জেরে রোমছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়। আর এ সবেরই অবশ্যম্ভাবী ফল হল ব্রণ। আজকাল মাস্কের কারণে ব্রণ বেরোতে দেখা যাচ্ছে হামেশাই! ফলে একটা নামও জুটে গেছে এই সমস্যার! অ্যাকনের সঙ্গে মিল রেখে এই ব্রণর নাম দেওয়া হয়েছে মাস্কনে! অর্থাৎ মাস্কের কারণে অ্যাকনে, অতএব মাস্কনে... বুঝলেন তো!
মুশকিল হল, যতই মাস্কের কারণে ব্রণ বেরোক, মাস্ক পরা বন্ধ করা যাবে না কিছুতেই! তবে ত্বকের যত্ন আরও একটু বাড়াত্তে অসুবিধে নেই! তাতে ত্বকের বদলে যাওয়া প্রয়োজনীয়তাগুলো মেটাতে পারবেন। আপনাদের সুবিধের জন্য আমরা কথা বলেছিলাম মুম্বইয়ের ত্বক তথা সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ ডক্টর পল্লবী সুলে/ Dr. Pallavi Sule -এর সঙ্গে। মাস্কনে নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিশদে কথা বলেছি, আর এই সমস্যা সমাধানের জন্য জেনে নিয়েছি কিছু বিশেষজ্ঞের টিপস!
- দিনে দু'বার মুখ ধুয়ে ফেলুন
- সুতির মাস্ক পরুন যাতে ত্বক শ্বাস নিতে পারে
- ভারী স্কিনকেয়ার বা মেকআপ প্রডাক্ট এড়িয়ে চলুন
- নিয়মিত ত্বক এক্সফোলিয়েট করুন
- প্রতিবার ব্যবহারের পর মাস্ক কেচে নিন
দিনে দু'বার মুখ ধুয়ে ফেলুন

লকডাউন চলাকালীন একদম প্রাথমিক ত্বক পরিচর্যার দিকগুলোও আমরা অনেক সময় উপেক্ষা করেছি! ডক্টর পল্লবী দিনে দু'বার গ্লাইকোলিক বা স্যালিসাইলিক অ্যাসিড যুক্ত ক্লেনজার দিয়ে মুখ ধোয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। "যাঁদের মুখে ব্রণ বেরোনোর সমস্যা রয়েছে, তাঁদের এমন ফেসওয়াশ ব্যবহার করা দরকার যা ত্বকের বাড়তি তেল উৎপাদন, বন্ধ রোমছিদ্রের মতো সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করতে পারবে এবং ব্রণর জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলতে পারবে। আপনার যদি শুষ্ক বা সেনসিটিভ ত্বক হয়, তা হলে কড়া কেমিক্যালবিহীন কোমল ক্লেনজার ব্যবহার করুন," বলছেন পল্লবী। Simple Kind To Skin Refreshing Face Wash কড়া কেমিক্যাল মুক্ত এবং সব ধরনের ত্বকের পক্ষে মানানসই।
সুতির মাস্ক পরুন যাতে ত্বক শ্বাস নিতে পারে

মাস্কের কাপড়ের ধরনের ওপরে অনেক কিছু নির্ভর করে। ডক্টর পল্লবী পরামর্শ দিচ্ছেন সুতির মাস্ক পরার। সার্জিকাল বা এন-95 মাস্ক পরবেন না। যাঁরা সামনে থেকে কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, সেই সব স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের জন্য বরাদ্দ রাখুন সার্জিকাল আর এন-95 মাস্ক। "সুতির নরম কাপড়ে তৈরি মাস্ক পরলে ত্বক শ্বাস নিতে পারে, একটানা অনেকক্ষণ পরে থাকলেও অসুবিধে হয় না। মাস্ক মুখ আর নাকের ওপর চেপে বসবে, তবে দেখে নিন তা যেন খুব টাইট না হয়। খুব টাইট হয়ে থাকলে ত্বকে লালচেভাব আর জ্বালা হতে পারে," বলছেন পল্লবী।
ভারী স্কিনকেয়ার বা মেকআপ প্রডাক্ট এড়িয়ে চলুন

"রোমছিদ্রের মুখ বন্ধ হওয়া আটকাতে আর সেই সঙ্গে ব্রণ বা র্যাশ এড়াতে মাস্কের নিচে চড়া মেকআপ করবেন না, খুব গাঢ় রঙের লিপস্টিক পরা থেকেও বিরত থাকুন," বলছেন পল্লবী। পাশাপাশি এড়িয়ে চলুন ভারী স্কিনকেয়ার সামগ্রীও। বেছে নিন হালকা ময়শ্চারাইজার, এসপিএফ অন্তত 30 হওয়া চাই। Ponds White Beauty Sun Protection Day Cream SPF 30 মেখে দেখুন। এটি আপনার ত্বক আর্দ্র রাখবে, মাস্কের দাগ বা ট্যান লাইনও কাছে ঘেঁষতে পারবে না।
নিয়মিত ত্বক এক্সফোলিয়েট করুন

ত্বক স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও সমস্যামুক্ত রাখতে নিয়মিত এক্সফোলিয়েট করা খুব দরকার। "দীর্ঘ সময় ধরে ফেস মাস্ক পরে থাকলে মুখের রোমছিদ্র বন্ধ হয়ে গিয়ে ব্রণ বেরোয়। সপ্তাহে দু'বার কোমল স্ক্রাব দিয়ে মুখ পরিষ্কার করলে এই সমস্যা এড়ানো সম্ভব," বলছেন পল্লবী। ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে Dermalogica Daily Superfoliant -এর মতো খুব কোমল ফরমুলার স্ক্রাব দিয়ে প্রতিদিনও মুখ এক্সফোলিয়েট করতে পারেন।
প্রতিবার ব্যবহারের পর মাস্ক কেচে নিন

মাস্কের নিচে যে উষ্ণ আর্দ্র পরিবেশ তৈরি হয়, তা ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধির আদর্শ ক্ষেত্র। এর সঙ্গে মুখের তেল, ঘাম আর জমে থাকা ময়লা যোগ হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে! পল্লবীর পরামর্শ, "যদি সুতির রিইউজেবল মাস্ক পরলে প্রতিবার ব্যবহারের পর কোমল সাবান বা ডিসইনফেকট্যান্ট দিয়ে মাস্ক ধুয়ে ফেলুন। এতে মুখে ব্রণ বেরোবে না, ত্বকে র্যাশ বা জ্বালাও হবে না।
Written by Manisha Dasgupta on Oct 07, 2020
Author at BeBeautiful.