চুলের যত্নের প্রসঙ্গে সবচেয়ে কম গুরুত্ব যে প্রডাক্টটিকে দেওয়া হয়, তা হল হেয়ার কন্ডিশনার। কিন্তু শুষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত চুলে আর্দ্রতা ফেরানোর পাশাপাশি চুলে জেল্লা, কোমলতা আর ঝলমলেভাব এনে দিয়ে চুলের ভোলটাই পুরোপুরি পালটে দিতে পারে কন্ডিশনার। যদি মনে করে থাকেন চুলে সুন্দরভাবে হাইড্রেটিং ডিপ কন্ডিশনিং ট্রিটমেন্ট করতে হলে একগাদা টাকা খরচ করতে হবে, তা হলে ভুল ভেবেছেন। রান্নাঘর বা বাড়ির সাধারণ সহজলভ্য টুকিটাকি উপাদান দিয়েই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এবং দারুণ হাইড্রেটিং কন্ডিশনার তৈরি করে নেওয়া সম্ভব। তা ছাড়া যেহেতু এ সব কন্ডিশনার সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক, তাই এদের বেশিরভাগই সবধরনের চুলের পক্ষে মানানসই এবং চুলের প্রয়োজনীয় জেল্লা আর আর্দ্রতা ফেরাতে যেমন খুশি ব্যবহার করা যায়। দারুণ না? সবধরনের চুল আর সমস্যার সমাধানে আমাদের সবচেয়ে পছন্দের পাঁচটি প্রাকৃতিক হেয়ার কন্ডিশনারের সন্ধান দিলাম আমরা, যা আপনাদের অন্তত একবার ব্যবহার করে দেখা দরকার। আসুন, তবে শুরু করা যাক...
- 1. মধু + অলিভ অয়েল অত্যন্ত শুষ্ক চুলের জন্য
- 2. দই+ডিম+মেয়োনিজ চুল ওঠার জন্য
- 3. অ্যাভোকাডো+নারকেল তেল+ডিমের কুসুম দুর্বল ভঙ্গুর চুলের জন্য
- 4. দারচিনি+মধু+দুধ রুক্ষ চুলের জন্য
- 5. তিল তেল+অ্যালো ভেরা জেল ছত্রাকের সংক্রমণ বা খুসকির জন্য
1. মধু + অলিভ অয়েল অত্যন্ত শুষ্ক চুলের জন্য

ধাপ 01: একটা বাটিতে দু' টেবিলচামচ মধু আর তিন টেবিলচামচ অলিভ অয়েল একসঙ্গে মিশিয়ে মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন।
ধাপ 02: এই মিশ্রণটা পুরো চুলে লাগিয়ে নিন, চুলের প্রান্তভাগে বেশি করে লাগাবেন কারণ এই অংশেরই সবচেয়ে বেশি পুষ্টির দরকার হয়।
ধাপ 03: শাওয়ার ক্যাপ বা গরম তোয়ালে দিয়ে চুল ঢেকে রাখুন, তারপর 20-30 মিনিট অপেক্ষা করুন।
ধাপ 04: ঠান্ডা জল আর কোমল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সেরা ফল পেতে সপ্তাহে অন্তত একবার ব্যবহার করুন।
কেন এটি কার্যকর -
মধু/Honey প্রাকৃতিক আর্দ্রতাদায়ক উপাদান, অর্থাৎ এটি পরিবেশ থেকে জলীয় অংশ শুষে নিয়ে আপনার চুলে আর্দ্রতার জোগান দেয়, চুল চকচকে রাখে। তা ছাড়া অলিভ অয়েলের তৈলাক্ত উপাফান অত্যন্ত শুষ্ক চুলেও পুষ্টি জুগিয়ে ইলাস্টিসিটি উন্নত করে তোলে এবং চুল ওঠা কমিয়ে দেয়।
2. দই+ডিম+মেয়োনিজ চুল ওঠার জন্য

ধাপ 01: বাটিতে দু' তিন চামচ টক দই নিন। তাতে এক টেবিলচামচ মেয়োনিজ মেশান আর একটা ডিম ভেঙে দিন। সব উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে মসৃণ ডেলাহীন একটা মিশ্রণ তৈরি করুন।
ধাপ 02: এই হেয়ার মাস্কটি যতটা সম্ভব সমানভাবে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগিয়ে নিন।
ধাপ 03: শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে মাথা ঢেকে দিন, তারপর আধঘণ্টা থেকে একঘণ্টা রেখে কোমল শ্যাম্পু আর ঠান্ডা জলে চুল ধুয়ে ফেলুন। মাথায় যাতে ডিমের অবশেষ জমে না যায়, তার জন্য ঠান্ডা জল ব্যবহার করা খুব জরুরি।
কেন এটি কার্যকর -
টক দই/Yogurt প্রোটিনের ভাঁড়ার যা চুল মজবুত রাখে, দইয়ের ল্যাকটিক অ্যাসিড তেলময়লা, প্রডাক্টের অবশেষ সাফ করে চুল আর স্ক্যাল্প তকতকে পরিষ্কার করে দেয়। প্রোটিনের আর একটি উৎস, মাস্কের ডিম চুলের বৃদ্ধি ঘটায়/eggs in your mask promotes hair growth , চুল ওঠা কমায় এবং চুলের জেল্লা আর ইলাস্টিসিটি উন্নত করে।
3. অ্যাভোকাডো+নারকেল তেল+ডিমের কুসুম দুর্বল ভঙ্গুর চুলের জন্য

ধাপ 01: একটা পাকা অ্যাভোকাডো বাটিতে চটকে নিন। তাতে এক টেবিলচামচ মধু আর একটা ফেটানো ডিমের কুসুম যোগ করে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
ধাপ 02: শুকনো চুলে এই মিশ্রণটা গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগান।
ধাপ 03: শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন, হেয়ার মাস্ক চুলে প্রায় 20-30 মিনিট বসতে দিন, তারপর ঠান্ডা জল আর কোমল শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
কেন এটি কার্যকর -
অ্যাভোকাডো হল বায়োটিন বা ভিটামিন বি/biotin or vitamin B কমপ্লেক্সের অত্যন্ত ভালো উৎস। চুল মজবুত করে চুলের বৃদ্ধি ঘটাতে এই উপাদানগুলি জরুরি ভূমিকা পালন করে। এই হেয়ার মাস্কে/ hair mask একটু নারকেল তেল যোগ করলে স্ক্যাল্পের অতিরিক্ত সেবাম সাফ হয়ে যায়। আর ডিমের কুসুম চুলের ফলিকলে প্রোটিন জুগিয়ে তাদের মজবুত করে তোলে, ফলে চুলের ভঙ্গুরতা কমে চুল ওঠা কমে যায়। এত সব উপকারিতাযুক্ত দারুণ হেয়ার মাস্কটি নিয়মিত ব্যবহার করলে আপনিও সুফল পাবেন।
4. দারচিনি+মধু+দুধ রুক্ষ চুলের জন্য

ধাপ 01: বাটিতে আধকাপ কাঁচা দুধ নিয়ে তাতে এক টেবিলচামচ মধু আর দু' টেবিলচামচ খাঁটি দারচিনি গুঁড়ো মেশান।
ধাপ 02: এই মিশ্রণে একটা গোটা ডিম ভেঙে দিয়ে সবটা আবার ভালো করে মেশান। পরের ধাপে যাওয়ার আগে মিশ্রণটা ডাবল বয়লারে এক মিনিট গরম করে নিন।
ধাপ 03: এই মিশ্রণটি পুরো চুল আর স্ক্যাল্পে লাগান। সবচেয়ে ভালো ফল পেতে আধঘণ্টা বসতে দিন, তারপর কোমল এসএলএস-মুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কেন এটি কার্যকর -
রূপচর্চায় কাঁচা দুধের উপকারিতা/benefits of raw milk নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই, বিশেষ করে চুলের ক্ষেত্রে। ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, লিপিডের মতো অত্যন্ত পুষ্টিকর উপাদানে ভরা দুধ চুল মজবুত করে, চুল ওঠা কমায়, চুলের বৃদ্ধি ঘটায়। দারচিনি গুঁড়োর উপস্থিতি স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং নির্জীব হেয়ার ফলিকলগুলোকে সতেজ করে তোলে। শেষত, মধু আর্দ্রতাবাহী হওয়ার সুবাদে বাতাস থেকে আর্দ্রতা শুষে নিয়ে চুলের বাইরের স্তরে ধরে রাখে, ফলে চুল হয়ে ওঠে কোমল, মসৃণ ও বাউন্সি।
5. তিল তেল+অ্যালো ভেরা জেল ছত্রাকের সংক্রমণ বা খুসকির জন্য

ধাপ 01: দু' টেবিলচামচ তিল তেল, দু'তিন চামচ খাঁটি অ্যালো ভেরা জেল (দোকান থেকে কিনতে পারেন, পাতা কেটেও বের করে নিতে পারেন), এক কাপ সাদা দই আর এক চামচ অলিভ অয়েল নিন।
ধাপ 02: সমস্ত উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে মসৃণ পেস্ট তৈরি করে নিন। চুলের গোড়ায় আর দৈর্ঘ্য বরাবর লাগান। লাগানোর আগে চুল ভেজা রাখবেন, শুকনো চুলে লাগাবেন না।
ধাপ 03: সেরা ফল পেতে অন্তত এক ঘণ্টা হেয়ার মাস্ক চুলে রেখে দিন, তারপর কোমল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কেন এটি কার্যকর -
তিল তেল/ sesame oil মাস্কে যোগ করার সবচেয়ে বড় উপকারিতা হল তার সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা। অ্যান্টিফাঙ্গাল আর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণে ভরা তিল তেল হেয়ার মাস্কে মেশালে তা স্ক্যাল্পের প্রদাহ, খুসকি, চুলকানি বা জ্বালাভাব কমানোর সহায়ক হয়। অ্যালো ভেরা জেলের উপস্থিতি অস্বস্তি আর প্রদাহ কমায়, ফলে খুসকিওয়ালা, চুলকানি আর প্রদাহযুক্ত স্ক্যাল্পের পক্ষে এটি খুবই কার্যকরী ঘরোয়া মাস্ক/DIY hair mask।
Written by Manisha Dasgupta on 10th Dec 2021