সেরা চুলের রং কোনটা জানেন? যা একটানা অনেকদিন একদম টিপটপ থাকে! চুল রং করতে যেমন ভালো লাগে, পার্লার থেকে বেরোনোর সময় নিজেকে বিশ্বসুন্দরী মনে হয়, ততটাই খারাপ লাগে যখন তিন-চারবার চুল ধোওয়ার পরেই ধীরে ধীরে ফিকে হতে থাকে রং! এই অভিজ্ঞতা কি আপনারও হয়েছে? আমরা সমব্যথী!
চুলের এই সমস্যার সমাধান করতে আমরা কথা বলেছিলাম ল্যাকমে সালোনের ন্যাশনাল ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর-হেয়ার, পূজা সিং-এর সঙ্গে। পূজা আমাদের জানিয়েছেন সঠিক হেয়ার কালার বাছাই ও রং দীর্ঘদিন ধরে রাখার কৌশল এবং তার সঙ্গে দিয়েছেন কিছু বিশেষ টিপস।
- কীভাবে বাছবেন সঠিক হেয়ার কালার
- মাথায় রাখুন টেকনিক আর ট্রেন্ড
- ওমব্রে
- বালায়াজ
- সোমব্রে
- মানি পিস কনট্যুরিং ফেস-ফ্রেমিং
- রং করা চুলের যত্ন নিয়ে বিশেষজ্ঞের টিপস
- চুলের রং ধরে রাখতে অবশ্য প্রয়োজনীয় প্রডাক্ট
কীভাবে বাছবেন সঠিক হেয়ার কালার

চুল রং করবেন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সালোনে যাওয়ার আগে কিছু কথা মাথায় রাখুন। গায়ের রঙের সঙ্গে মানানসই শেড বাছার পাশাপাশি কালারিংয়ের পর হেয়ার কেয়ার রুটিন কেমন হবে, এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যই সুনিশ্চিত করে আপনার চুলের রং কতদিন স্থায়ী হবে।
1. শুরু করুন হেয়ার কনসাল্টেশন দিয়ে: শহরের ল্যাকমে সালোনে যখন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলবেন, তখন যাবতীয় খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করুন। পূজা বলছেন, "আপনার হেয়ার কেয়ার রুটিন, আপনার লাইফস্টাইল, পেশা, হেয়ারস্টাইলিংয়ে কতটা সময় দেন, এ সব তথ্য আপনার হেয়ার এক্সপার্টকে জানতে আর বুঝতে হবে।"
2. রেফারেন্স ছবি: পূজা আরও বলছেন, "হেয়ার এক্সপার্টের সঙ্গে কথা বলার সময় পছন্দের হেয়ার কালারের বেশ কিছু ছবি রেফারেন্স হিসেবে সঙ্গে রাখুন। এতে এক্সপার্ট বুঝতে পারবেন আপনি ঠিক কী চাইছেন।" বিকল্প হিসেবে আপনিও ছবি দেখতে চাইতে পারেন, তাতে বুঝতে পারবেন একটা শেড চুলে লাগানোর পরে ঠিক কেমন দেখাবে এবং সেইমতো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন চুলের সম্পূর্ণ ভোলবদল করবেন, নাকি হালকা কিছু পরিবর্তন আনবেন।
3. গায়ের রঙের কথা মাথায় রাখুন: গায়ের রঙের প্রসঙ্গে জানাই, কিছু হেয়ার কালার আপনার লুক যেমন পালটে দিতে পারে, তেমনি সম্পূর্ণ নষ্ট করেও দিতে পারে। তাই কোনও রং বাছাইয়ের আগে দুটো বিষয় মাথায় রাখুন- কালার শেড আর পদ্ধতি। পূজা ব্যাখ্যা করছেন, "যাঁদের রং ফরসা তাঁরা ব্লন্ড, গোল্ড, লাইট ওয়ার্ম বা কুল শেড বাছতে পারেন, অন্যদিকে শ্যামবর্ণ বা উষ্ণ গায়ের রঙের মালকিনেরা বেছে নিন মেহগনি, চেস্টনাট, চকোলেট, বার্গান্ডি বা লালের শেড।"
4. কালার কম্বিনেশন: এমন কোনও হেয়ার ডাই বাছবেন না যার শেড আপনার স্বাভাবিক চুলের রঙের থেকে একেবারে বিপরীত। তাতে সুন্দর, ব্যালান্সড লুক পাবেন না। হালকা হাইলাইট করাতে চাইলে বাকি চুলের রংটাও এমনভাবে পালটে নিন যাতে হাইলাইটের রঙের সঙ্গে মানিয়ে যায়। পূজা কিছু আদর্শ কম্বিনেশনের কথা বলেছেন, তার মধ্যে রয়েছে ক্যারামেল, ডার্ক ব্লন্ড বা চেস্টনাটের র সঙ্গে লাইট ব্লন্ড বা গোল্ড হাইলাইট। অন্যদিকে লালের সঙ্গে ভালো লাগবে বার্গান্ডি বা অবার্ন।
মাথায় রাখুন টেকনিক আর ট্রেন্ড

'টেকনিক' শব্দটা শুনে আবার ভাববেন না, চুল রং করাটা খুব জটিল কোনও বিষয়! এটি হল সেই পদ্ধতি যা মেনে আপনার চুল রং করা হবে। মনে রাখতে হবে চুলে হেয়ার কালারের চূড়ান্ত ফিনিশ কেমন দেখাবে তা নির্ভর করে এই টেকনিকের ওপর। পূজা বলছেন, "আজকাল ট্রেন্ড হিসেবে নানা ধরনের কালার টেকনিক চলছে, তার মধ্যে রয়েছে বালায়াজ, ওমব্রে, সোমব্রে, বেবি লাইটস আর মানি পিস কন্ট্যুরিং ফেস-ফ্রেমিং।"
ওমব্রে

এই পদ্ধতিতে দুটি রং ব্লেন্ড করা হয়। গোড়ার দিকের চুলটায় স্বাভাবিক রং বা গাঢ় শেডের রং দিয়ে চুলের শেষ প্রান্তে পছন্দের রঙের শেডের সঙ্গে ব্লেন্ড করানো হয়। এই পদ্ধতিতে খুব মসৃণভাবে ফিনিশ হয় এবং কোনও বিভাজন রেখা থাকে না, ফলে দুটি রং আলাদা বলে মনে হয় না।
বালায়াজ

এটি অনেক বেশি ফ্রি হ্যান্ড কালার টেকনিক, এতে রং করা চুল ফয়েল দিয়ে আলাদা করার দরকার পড়ে না। হেয়ার এক্সপার্ট রংটা হাতে লাগিয়ে নেন। প্রথমে চুলের শেষ ভাগটেয় রং করা হয়, তারপর চুলের মাঝামাঝি দিকটায় ধীরে ধীরে রং লাগানো হয়, ফলে একটা নরম, গ্রাডিয়েন্ট কালার ফিনিশ আসে।
সোমব্রে

এই শব্দটি দুটি আলাদা শব্দের মিশেলে তৈরি - সফট আর ওমব্রে। ওমব্রে স্টাইলটি এই পদ্ধতিতে অনেক বেশি স্বাভাবিক দেখায় এবং একই টোনের দুটি হেয়ার কালারের মধ্যে ব্লেন্ডিং করা হয়।
মানি পিস কনট্যুরিং ফেস-ফ্রেমিং

পূজা জানাচ্ছেন, সঠিক কালার কম্বিনেশন করা গেলে এই পদ্ধতিতে চুলের রং মুখের শেপের পরিপূরক হয়ে ওঠে। এই পদ্ধতিতে মুখের সামনে দু'পাশে ফ্রেমের মতো করে চুলে হালকা রং দিয়ে বালায়াজ ট্রিটমেন্ট করা হয়। লুকে একটা ডাইমেনশন আনার দারুণ উপায় এটি। সাম্প্রতিক হেয়ার কালার ট্রেন্ড নিয়ে পূজা জানাচ্ছেন, ব্লেন্ড করা গ্লোবাল হাইলাইট আর বার্গান্ডি, লাল, ক্যারামেল ব্রাউন আর বেইজ ব্লন্ড দিয়ে এক টোনের লুক আজকাল দারুণ জনপ্রিয়। পাশাপাশি গাঢ় পার্পল-পিঙ্ক আর লাইল্যাকের মতো উজ্জ্বল আর প্যাস্টেল শেডও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
রং করা চুলের যত্ন নিয়ে বিশেষজ্ঞের টিপস

টিপ#1: পূজা জানাচ্ছেন, চুল রং করে বাড়ি ফেরার পর 24 থেকে 48 ঘণ্টা পর্যন্ত চুলে শ্যাম্পু করবেন না, কারণ চুলে রং ভালোভাবে বসতে এই সময়টা দরকার। চুলের রং দীর্ঘস্থায়ী করার এটাই প্রথম পদক্ষেপ।
টিপ#2: এবার হেয়ার কেয়ার প্রডাক্ট বাছাইয়ের পালা। পূজার পরামর্শ হল, "সালফেট-মুক্ত শ্যাম্পু, কন্ডিশনার আর হেয়ার সিরাম লাগান। আমাদের সুপারিশ মানলে টিজি কপিরাইট কালার শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার/ TIGI Copyright Color Shampoo and Conditioner, ব্যবহার করুন, এটি আপনার চুলের রঙের উজ্জ্বলতা বজায় রাখে এবং চুল দীর্ঘদিন তরতাজা রাখে।"
টিপ#3: রং করা চুল গরম জলে ধোওয়া একেবারেই উচিত নয়। হালকা ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে চুল ধোবেন, তাতে রং ঠিক থাকবে, চট করে হালকা হয়ে যাবে না। শ্যাম্পু করা হয়ে গেলে চুল থেকে বাড়তি জল চেপে ফেলে দিন, চুলের দৈর্ঘ্য বরাবর কন্ডিশনার বা হেয়ার মাস্ক লাগান। প্রডাক্ট যাতে পুরো চুলে সমানভাবে ছড়িয়ে যায়, তার জন্য চুল আঁচড়েও নিতে পারেন এই সময়। পাঁচ মিনিট পরে স্বাভাবিক তাপমাত্রার জলে চুল ধুয়ে ফেলুন। এর ফলে কন্ডিশনার চুলের কিউটিকলের মুখ বন্ধ করে দেবে, রং থাকবে অটুট।
টিপ#4: হেয়ার সিরাম বাদ দেবেন না। বিকল্প হিসেবে চুলের জট ছাড়ানোর জন্য লিভ-ইন কন্ডিশনিং ক্রিম লাগাতে পারেন। সিরাম চুলে বাড়তি চকচকে ভাব এনে দেবে, অতিবেগুনি রশ্মি থেকে চুল রক্ষা করবে। টিজি কপিরাইট কেয়ার কালার লাস্টার অয়েল/ TIGI Copyright Care Colour Lustre Oil ব্যবহার করতে পারেন, তাতে চুলে গ্লস আর উজ্জ্বলতা, দুটোই বাড়বে।
চুলের রং ধরে রাখতে অবশ্য প্রয়োজনীয় প্রডাক্ট

- চুলের রং সুরক্ষিত রাখতে সালফেট-মুক্ত শ্যাম্পু
- চুলের রং বেশিদিন স্থায়ী করতে কালার-প্রোটেকটিং কন্ডিশনার
- চকচকে ভাব বাড়াতে এবং অতিবেগুনি রশ্মি থেকে চুল সুরক্ষিত রাখতে হেয়ার সিরাম
- সালোনে প্রতি মাসে একবার হেয়ার স্পা বা অন্য পুষ্টিদায়ক ট্রিটমেন্ট।
মূল ফোটো সৌজন্য: @thatbohogirl
Written by Manisha Dasgupta on 10th Oct 2021