সুস্থ, ঝলমলে চুল পাওয়ার ইচ্ছেটা এখন আর নেহাতই স্বপ্ন নয়! কারণ সুস্থ চুল পাওয়ার পথে যে মূল সমস্যাগুলো রয়েছে, অর্থাৎ খুসকি, চুল ওঠা, চুলের রুক্ষতা ইত্যাদি মেটানোর জন্য একটি দুর্দান্ত সমাধান খুঁজে পেয়েছি আমরা। প্রতিনিয়ত আপনার চুল রোদ, দূষণ এবং নানারকম ক্ষতিকর কেমিক্যালের প্রভাবে হারিয়ে ফেলে নিজের জেল্লা। চুলের আর্দ্রতা নষ্ট হয়ে যায় এবং নানা সমস্যা দেখা দেয়।
রোজকার ব্যবহার্য শ্যাম্পু, কন্ডিশনার আর সিরাম আপাতভাবে চুলের জেল্লা ফিরিয়ে আনতে পারলেও মূল সমস্যাটির সমাধান কিন্তু করতে পারে না। এরকম সময়ে আপনার কাজে লাগবে পুষ্টিকর ঘরোয়া উপাদান। আপনার ফ্রিজে যদি টক দই থাকে, তা হলে চুলের অনেক সমস্যারই সমাধান করে ফেলতে পারবেন আপনি। ভিটামিন বি5, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম আর ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো নানা পুষ্টিকর উপাদানে ভরপুর দই আপনার চুলের যাবতীয় সমস্যার সঠিক যত্ন নেয়। দেখে নিন চুলে দই ব্যবহার করার উপকারিতা।
- #1: চুল কন্ডিশন করে
- #2: খুসকি কমায়
- #3: চুল ওঠা প্রতিরোধ করে
- #4: চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়
- #5: রুক্ষতা কমায়
#1: চুল কন্ডিশন করে

দইয়ের ফ্যাট আর ল্যাকটিক অ্যাসিড চুলে আর্দ্রতা জুগিয়ে তা নরম আর মসৃণ রাখে। আসলে দই চুলের উপর প্রাকৃতিক কন্ডিশনারের মতোই কাজ করে। আপনার স্ক্যাল্প যদি শুষ্ক প্রকৃতির হয়, তা হলে অবশ্যই দই মাখুন, বিশেষ করে শীতকালে। দই মাথার চুলকুনি, জ্বালাভাব কমায়, প্রাকৃতিকভাবে শুষ্কতাও কমাতে সাহায্য করে।
#2: খুসকি কমায়

চুলের সবচেয়ে বড় শত্রু হল খুসকি। খুসকি কমানো একদিকে যেমন কঠিন, তেমনি অস্বস্তিকরও বটে কারণ অতিরিক্ত খুসকি ঝরে পোশাকে লেগে থাকে, আর গাঢ় রঙের পোশাক হলে তা বিশ্রীভাবে ফুটেও থাকে। প্রোটিন আর ভিটামিন বি5-এ ভরপুর দই আপনার স্ক্যাল্পে আর্দ্রতা জোগানোর পাশাপাশি খুসকির সমস্যাও দূর করে। দইয়ের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াধর্মী গুণ মাথার তালুর চুলকুনি আর জ্বালাভাব কমায়।
#3: চুল ওঠা প্রতিরোধ করে

মানসিক চাপ, জিনঘটিত কারণ, কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট, আয়রনের অভাব এবং স্টাইলিং টুলের অতিরিক্ত ব্যবহারই চুল ওঠার মূল কারণ। সারা দিনে 50 থেকে 100টা চুল ওঠা স্বাভাবিক, তার চেয়ে বেশি চুল উঠলে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।
দইয়ে ল্যাকটিক অ্যাসিড রয়েছে যা মাথায় জমে থাকা মৃত কোষ দূর করে, ফলে চুলের গোড়া মজবুত হয় এবং চুলের বাড়বৃদ্ধিরও উন্নতি ঘটে।
#4: চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়

প্রতিদিন আপনার চুলের উপর দিয়ে অনেক ঝড়ঝাপটা যায়। রোদের তাত, ধুলো, দূষণের মতো পরিবেশগত কারণ এবং স্টাইলিং টুলের অতিরিক্ত ব্যবহার বা বেশি বেশি শ্যাম্পু করার মতো কারণে আপনার চুল একটা সময়ের পর শুষ্ক, বিবর্ণ ও নিষ্প্রাণ দেখাতে পারে।
এ সব সমস্যা কাটিয়ে চুলের জেল্লা বাড়াতে চাইলে আপনার হাতিয়ার দই। দইয়ের মধ্যে চুল পরিষ্কার করা আর আর্দ্রতা বাড়ানোর গুণ রয়েছে, ফলে নিয়মিত দই মাখলে ঝলমলে চুল পেতে পারেন আপনি।
#5: রুক্ষতা কমায়

আর্দ্র আবহাওয়ায় চুল অনেক বেশি রুক্ষ আর উড়ো হয়ে যায়। চুলের বাইরের স্তর বাতাস থেকে আর্দ্রতা শুষে নিয়ে ফুলে ওঠে, ফলে চুল রুক্ষ দেখায় আর উড়ো দেখায়।
চুলের রুক্ষতা এমনই একটা সমস্যা যা কমাতে চাইলে নিয়মিত যত্ন নিতেই হবে। দইয়ে পর্যাপ্ত ভিটামিন বি5 আর ভিটামিন ডি থাকার কারণে তা রুক্ষ চুল মসৃণ করতে সাহায্য করে।
আপনার চুল আরও স্বাস্থ্যবান, ঝলমলে করে তুলতে রইল তিনটি ঘরোয়া দই দিয়ে তৈরি হেয়ার মাস্কের হদিশ:

দই+মেথি+পেঁয়াজের রস দিয়ে তৈরি হেয়ার মাস্ক:
চার টেবিলচামচ টক দই, তিন টেবিলচামচ পেঁয়াজের রস আর এক চাচামচ গুঁড়ো করা মেথি একসঙ্গে মেশান। এই মাস্কটি স্ক্যাল্পে লাগিয়ে 20 থেকে 30 মিনিট রেখে দিন। তারপর কোমল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। পেঁয়াজের রস আর মেথির সঙ্গে মিলে দই খুসকি কমাতে সাহায্য করে।

দই+মধুর হেয়ার মাস্ক:
এক কাপ টক দই আর দু' চাচামচ মধু একটা বাটিতে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি চুলে আর স্ক্যাল্পে ভালো করে ঘষে ঘষে মেখে নিন। মাস্কটি 20 মিনিট চুলে মেখে থাকুন, তারপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। দই আর মধু একসঙ্গে আপনার স্ক্যাল্প শীতল রাখবে, চুলও থাকবে মোলায়েম। যাঁদের মাথার তালু আর চুল শুষ্ক, তাঁদের জন্য এই কন্ডিশনিং মাস্কটি খুবই উপকারী।

টক দই+কারিপাতার হেয়ার মাস্ক:
আধ কাপ টক দই নিন। তারপর একমুঠো কারিপাতা থেঁতো করে বা শুকিয়ে গুঁড়ো করে দইয়ে মিশিয়ে দিন। এবার এই মাস্কটি পুরো চুলে সমানভাবে লাগিয়ে নিন, চুলের ডগার দিকটা খুব ভালো করে মাখাবেন। 45 মিনিট রেখে তারপর কোমল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কারিপাতায় প্রচুর প্রোটিন আর বিটা-ক্যারোটিন থাকে যা চুল ওঠা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
Written by Manisha Dasgupta on 22nd Jul 2020