নেটফ্লিক্সের সুবাদে দেশি-বিদেশি বহু সিনেমা আর ওয়েবসিরিজ এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। সেই সুবাদে যতবার কোরিয়ার ছবি দেখতে বসি, ততবার চোখ কেড়ে নেয় কোরিয়ার মেয়েদের মোমপালিশ করা আলো পিছলোনো নিখুঁত ত্বক! ওঁদের এমন পোর্সিলিনের মতো মসৃণ ঝকঝকে ত্বকের রহস্য কী? সারা বিশ্ব যখন এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ব্যস্ত, কোরিয়ান মেয়েরা তখন সৌন্দর্যের জগতে পর পর মাইলস্টোন ছুঁয়ে ফেলছেন। তবে ওঁদের পক্ষেও কিন্তু কাজটা সহজ নয়! আসলে এমন কাচের মতো স্বচ্ছ, নিখুঁত ত্বক ধরে রাখতে ওঁদের প্রচুর খাটতে হয়! নজর দিতে হয় ত্বক পরিচর্যার রুটিনের দিকে, খাওয়াদাওয়ার দিকে। বেছে নিতে হয় সঠিক বিউটি প্রডাক্ট। এ ছাড়াও আরও অনেক কিছু ওঁরা করেন যাতে ত্বক সুস্থ আর সুন্দর থাকে। শিশুকন্যাদের একদম ছোটবেলা থেকেই রূপচর্চার নানা দিক নিয়ে শেখানো হয়, প্রজন্মের পর প্রজন্মের হাতে পৌঁছে যায় ঝলমলে ত্বক পাওয়ার গোপন রহস্য! আসলে এ সব কিছুই কোরিয়ার সৌন্দর্য সংস্কৃতির অঙ্গ।

ভাবছেন তো, কোরিয়ার মেয়েরা এমন কী করেন যাতে তাঁদের ত্বক এমন নিখুঁত আর উজ্জ্বল থাকে বছরের পর বছর? কী সেই রহস্য যাতে বয়সও থাবা বসাতে পারে না তাঁদের মসৃণ ত্বকে? সেই প্রশ্নের উত্তরই আপনাদের কাছে হাজির করছি আমরা। এমন কিছু কোরিয়ার রূপরহস্য নিয়ে এসেছি আমরা, যা নিয়মিত মেনে চললে আপনার ত্বকের যাবতীয় সমস্যা আর নিষ্প্রাণভাব উধাও হয়ে ফুটে উঠবে লাবণ্য আর গোলাপের মতো সজীবতা! রইল 9 টি কোরিয়ার রূপরহস্যের হদিশ যা আপনার ত্বককেও করে তুলবে কাচের মতো স্বচ্ছ আর মসৃণ! অবিকল কোরিয়ার মেয়েদের মতোই! তাই পড়তে থাকুন...

 

ঈষদুষ্ণ জলে বাষ্প স্নান

ঈষদুষ্ণ জলে বাষ্প স্নান

স্টিম আর ফেসিয়াল মাসাজ আপনার ত্বকের কোষগুলোকে সুস্থ আর পুনরুজ্জীবিত করে তুলতে পারে। কোরিয়ার মেয়েরা জানেন সে কথা। তাই প্রতিদিন সকালে ঈষদুষ্ণ জলে বাষ্প স্নানের পাশাপাশি তাঁরা মুখে ঘরোয়া ফেসিয়াল নেন। স্টিম ত্বকের রোমছিদ্রগুলো খুলে দেয়, রোমছিদ্রের গভীরে জমা হওয়া ধুলোময়লা বের করে দেয়। আর ভেজা ত্বকে মাসাজ করলে ত্বক তরুণ আর উজ্জ্বল থাকে। ধোঁয়া ওঠা হালকা গরম জলে স্নান করুন, একই সঙ্গে মুখ আর ঘাড়ে মাসাজ করুন। ত্বক আর্দ্র আর সুস্থ থাকবে। আঙুল দিয়ে বৃত্তাকারে উপরের দিকে স্ট্রোক করে 5-7 মিনিট মাসাজ করুন। বাড়তি উপকার আর আর্দ্রতা পেতে মাসাজের সময় অয়েল ক্লেনজার বা এসেন্সও ব্যবহার করতে পারেন।

 

ভরসা রাখুন চায়ে

ভরসা রাখুন চায়ে

চায়ের উপকারিতার কথা অনেকেই জানেন, কোরিয়ার মেয়েরা জানেন আরও বেশি করে! শুধু স্বাদ-গন্ধের জন্য তাঁরা চা খান না, বরং ত্বক ও স্বাস্থ্যরক্ষায় চায়ের যে অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে, তা সম্পূর্ণ কাজে লাগান তাঁরা। কোরিয়ার মেয়েরা যে সব বিউটি টি-এর ওপর ভরসা রাখেন, তার মধ্যে রয়েছে জিনসেং টি, রোস্টেড বার্লি টি আর গ্রিন টি। এ সব চা অ্যান্টি-অক্সিডান্টে ভরপুর, ব্রণ এবং ত্বকের নানা সমস্যার সঙ্গে লড়াই করতে দক্ষ! ফলে ব্রণ যেমন দূরে থাকে, তেমনি আপনি পেয়ে যান ঝকঝকে উজ্জ্বল ত্বক। একই সঙ্গে এ সব চা ওজন কমানো ও রক্ত সংবহন তন্ত্রের পক্ষেও খুব ভালো, যা আখেরে আপনার তারুণ্যে ভরা সৌন্দর্যকেই ধরে রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন এ সব চায়ের যে কোনও একটি এক কাপ করে নিয়মিত খেলে আপনি পেয়ে যাবেন স্বাস্থ্যের দীপ্তিতে ভরপুর দাগহীন ত্বক।

 

মুখের ব্যায়াম করে দেখুন

মুখের ব্যায়াম করে দেখুন

কোরিয়ার মেয়েরা নিজেদের ত্বক টানটান নিখুঁত রাখতে নানান পদ্ধতি সাহায্য নেন। কোরিয়ার মেয়েদের মুখের সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো বিশেষত্ব হল তাঁদের ইংরেজি V আকৃতির চোয়াল আর চিবুক। এমন ঈর্ষণীয় চোয়ালের গঠন তাঁরা পান কিছু মুখের ব্যায়াম করে। তাঁরা এমনভাবে মুখ স্ট্রেচ করেন যাতে ত্বক টানটান আর উজ্জ্বল থাকে। ঠোঁট কোঁচকানো, ডানপাশ বাঁ পাশে ঘোরানো, ইংরেজি ভাওয়েল অক্ষরগুলো জোরে উচ্চারণ করা, হাসা, চিবুক উঁচু রেখে ঢোঁক গেলার চেষ্টা করার মতো কিছু মুখের ব্যায়াম ঝুলে পড়া আলগা ত্বক টানটান করে তুলতে সাহায্য করে। প্রতিদিন এই ব্যায়ামগুলো কিছুক্ষণের জন্য করুন, মুখ স্বাভাবিকভাবে কনট্যুর হয়ে যাবে, তফাতটা আপনিও বুঝতে পারবেন সহজে।

 

ঝকঝকে ত্বকের জন্য চারকোল

ঝকঝকে ত্বকের জন্য চারকোল

পরিষ্কার ঝকঝকে ত্বক পেতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে চারকোল। ব্ল্যাকহেডস দূরে রাখতেও আমাদের ভরসা চারকোল। কিন্তু জানেন কি, কোরিয়ার মেয়েরাই চারকোল ফেস মাস্কের সঙ্গে গোটা পৃথিবীর পরিচয় করিয়েছিলেন ও তা জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন! কোরিয়ার বিউটি ট্রেন্ড হিসেবে যা এসেছিল, সেই চারকোল মাস্ক এখন সর্বত্র সমাদৃত। এটি ত্বক এক্সফোলিয়েট করে, একবারে ব্ল্যাকহেডস আর হোয়াইটহেডস, দুইই বিদায় করে। কোরিয়ার মেয়েরা চারকোল শিট মাস্ক ব্যবহার করেন, অথবা নিজেরাই ব্ল্যাকহেড ক্লিয়ারিং মাস্ক বানিয়ে নেন। ঘরোয়া ফেস মাস্কে অ্যাকটিভেটেড চারকোল সহ আরও নানা প্রাকৃতিক উপাদান থাকে যা ব্ল্যাকহেডস পরিষ্কার করে এবং ত্বক করে তোলে ঈর্ষণীয়ভাবে সুন্দর।

 

স্কিনকেয়ার প্রডাক্ট মাখার কায়দা

স্কিনকেয়ার প্রডাক্ট মাখার কায়দা

ত্বকের উপযোগী, ভালো গুণমানের ময়শ্চারাইজার, ক্রিম বা সিরাম ব্যবহার করা যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি সে সব সঠিকভাবে মাখা। রাতে স্কিনকেয়ার প্রডাক্ট মাখার সময় কোরিয়ার মেয়েরা এই ব্যাপারটির দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখেন, ফলে ত্বক পরিচর্যার উপাদানের যাবতীয় উপকারটুকু তাঁরা পেয়ে থাকেন। কীভাবে ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করেন তাঁরা? মুখে ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে তাঁরা শুধু ঘষে মেখে কাজ সারেন না। মুখে লাগানোর আগে তাঁরা প্রডাক্টটি হাতে বা আঙুলে ঘষে হালকা গরম করে নেন, তারপর বৃত্তাকারে সারা মুখে মেখে নেন। মুখে ক্রিমটি লাগানোর পর তাঁরা আঙুল দিয়ে ট্যাপ করে ত্বকে হালকা মাসাজ করেন, কারণ কোরিয়ার মেয়েরা মনে করেন এতে প্রডাক্টটি ত্বকে ভালোভাবে শোষিত হয় এবং তাতে বাড়তি বিউটি বেনিফিট পাওয়া যায়। এমনকী, টোনার লাগানোর সময়ও তাঁরা মুখে একবারে না লাগিয়ে আঙুল দিয়ে মুখে ট্যাপ করে নেন, যাতে ত্বক টোনার ভালো করে শুষে নিতে পারে।

 

ভেজা কাপড় দিয়ে এক্সফোলিয়েট

ভেজা কাপড় দিয়ে এক্সফোলিয়েট

ত্বকের সৌন্দর্য ও সুস্থতা রক্ষায় এক্সফোলিয়েশনের ভূমিকা তো সবাই জানেন! কোরিয়ার মেয়েরা এক্সফোলিয়েশনের ব্যাপারটা আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছেন। দ্রুত ও কার্যকর ত্বক পরিচর্যার উপায় হিসেবে তাঁরা একটি পদ্ধতি অনুসরণ করেন। একটুকরো নরম কাপড় তাঁরা হালকা গরম জলে ডুবিয়ে তা দিয়ে মুখ স্ক্রাব করে নেন। এটি ত্বকের পক্ষে খুব কোমল এবং এক্সফোলিয়েশনের কাজটাও ভালোভাবে করে। মুখের সমস্ত তেলময়লা কাপড়ে লেগে উঠে আসে আর ত্বক মুহূর্তে পরিষ্কার ঝকঝকে হয়ে যায়। এর ফলে বলিরেখা আর সূক্ষ্মরেখাও দূরে থাকে। গরম জলে একটা পরিষ্কার সুতির কাপড় ভিজিয়ে চিপে নিন। তারপর ওপরের দিকে স্ট্রোক করে মুখটা কাপড় দিয়ে মুছে নিন, ত্বক এক্সফোলিয়েট হয়ে যাবে।

 

যত্ন নিন গলার

যত্ন নিন গলার

মাথা থেকে পা পর্যন্ত নিখুঁত সুন্দর হয়ে ওঠার উপায় কী জানেন? মাথা থেকে পা পর্যন্ত ত্বকের সঠিক যত্ন নেওয়া। কোরিয়ার মেয়েরা ত্বক পরিচর্যার বিষয়টিকে খুবই গুরুত্ব দেন এবং শরীরের প্রতিটি অংশের যত্নও নেন সমানভাবে। তাই মুখের সমান যত্ন পায় গলাও। এই বিষয়টি কোরিয়ার মেয়েদের কাছ থেকে আমাদের শেখার আছে। গলায় ক্রিম লাগিয়ে তাঁরা উপরের দিকের স্ট্রোক করে মাসাজ করে নেন, এতে গলার ত্বকও মুখের মতোই তরুণ আর মসৃণ থাকে। গলার ত্বক যদি কোঁচকানো বিবর্ণ হয়, তা হলে আর উজ্জ্বল নিখুঁত মুখ পেয়ে লাভই বা কী বলুন!

 

ডবল ডোজে স্কিনকেয়ার

ডবল ডোজে স্কিনকেয়ার

ত্বকের উপকারিতা সর্বোচ্চ মাত্রায় পেতে হলে আপনাকে তার জন্য প্রচেষ্টাও দিতে হবে দ্বিগুণ। কোরিয়ার সৌন্দর্য বিশারদেরা বলেন যে কোনও স্কিনকেয়ার প্রডাক্ট ডবল ডোজে লাগালে তার উপকারিতা দ্বিগুণ হয়, ত্বকের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। সে জন্যই কোরিয়ার মেয়েরা নিজেদের ত্বক পরিচর্যার রুটিনে ডবল ক্লেনজিং, ডবল আই মাস্ক আর ডবল হাইড্রেশনের ওপর আস্থা রাখেন। ত্বক পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে তাঁরা ব্যবহার করেন একটি ফোমিং ফেসওয়াশ ও একটি অয়েল-বেসড ক্লেনজার। এই পদ্ধতিতে মুখ ধুলে মুখের সমস্ত মেকআপ আর ধুলোময়লা নিঃশেষে ধুয়ে যায়। চোখের কোণে বলিরেখা ও সূক্ষ্ম রেখার মোকাবিলা করতে তাঁরা ব্যবহার করেন ডবল আই মাস্ক। ত্বক আর্দ্র রাখতেও তাঁরা প্রথমে একটি হালকা, ওয়াটার-বেসড ময়শ্চারাইজার মাখেন, ও তারপর ত্বকে বাড়তি আর্দ্রতার সঞ্চার করতে মেখে নেন ভারী আর ঘন ক্রিম বা লোশন। এতে আর্দ্রতা ত্বকের গভীরে আটকে থাকে এবং আপনি পেয়ে যান মসৃণ, তরুণ ত্বক।

 

ওভারনাইট মাস্ক লাগিয়ে ঘুমোনো

ওভারনাইট মাস্ক লাগিয়ে ঘুমোনো

আপনার ত্বকের ওপর দিয়ে সারাদিন যত ঝড়ঝাপটা যায়, তা কাটিয়ে ওঠার পদ্ধতি শুরু হয় রাতে। আপনি যখন ঘুমোন, সেই সময় আপনার ত্বক নিজের সব ক্ষতি সারিয়ে পুনরুজ্জীবিত হয়ে ওঠে। ত্বকের কোষগুলো সুস্থ হয়ে ওঠে, কোলাজেন বৃদ্ধি পায়, আর ত্বকে নতুন প্রাণসঞ্চার ঘটে। এ জন্য কোরিয়ার মেয়েরা ঘুমের সময়টুকুর ওপর বিশেষ জোর দেন। শুধু তাই নয়, ওভারনাইট মাস্ক না লাগিয়ে তাঁরা ঘুমোতে যানই না! তাতে ত্বকের হারিয়ে যাওয়া আর্দ্রতা ফিরে আসে, সকালে ত্বক উজ্জ্বল আর তরতাজা দেখায়। ওভারনাইট মাস্ক মুখে বয়সের দাগ, বিবর্ণভাব রুখে দিয়ে আপনার ত্বকে ফিরিয়ে আনে ঝলমলেভাব, আর সকালে আপনি হয়ে ওঠেন আরও সুন্দর আর ফ্রেশ।