ত্বকের যত্নের ব্যাপারে আপনি কি আমাদের মতোই খুঁতখুঁতে? আমাদের মতো আপনার বাথরুমের তাকগুলোও কি নানাধরনের স্কিনকেয়ার প্রডাক্টের ছোটবড় শিশিতে ভর্তি? মুখে নানাধরনের স্কিনকেয়ার প্রডাক্ট মাখতে কি আপনার দারুণ ভালো লাগে? কিন্তু আপনি কি জানেন, অনেক ক্ষেত্রেই একাধিক উপাদান একসঙ্গে কাজ করে না? পরেরবার মুখে একটার পর একটা প্রডাক্ট মাখার আগে জেনে নিন কিছু জরুরি তথ্য।
আমাদের ত্বক পরিচর্যার রুটিনে যদি কোনও ম্যাজিক উপাদান থাকে, সেটি হল ভিটামিন সি। অত্যন্ত শক্তিশালী এই উপাদানটি ফ্রি র্যাডিক্যালের দৌরাত্ম্য কমায়, ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোকে সুস্থ করে তুলে ত্বক তরুণ রাখে, কালো দাগছোপ কমায়, কোলাজেন তৈরির পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে এবং দূষিত ক্ষতিকর পদার্থ থেকে ত্বককে রক্ষা করে। কিন্তু ভিটামিন সি-এর সঙ্গে অন্য কোনও প্রডাক্ট যোগ করা বা মাখার সময় বিশেষ খেয়াল রাখা দরকার। হয়তো এই দুটি উপাদানই আলাদাভাবে আপনার ত্বকের পক্ষে খুবই উপকারী, কিন্তু তারা যদি একসঙ্গে মেশে, তা হলে ত্বকের পক্ষে তা হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে। তাই জেনে নিন ভিটামিন সি-এর সঙ্গে কোন কোন উপাদান মেশানো চলবে না একেবারেই!
ভিটামিন সি+বেনজল পারঅক্সাইড

অল্প থেকে মাঝারি ব্রণর চিকিৎসা হিসেবে বেনজল পারঅক্সাইড ব্যবহার করা হয়। এই উপাদানটি ব্রণ উদ্রেককারী ব্যাকটেরিয়া কমায়, পাশাপাশি ত্বক শুষ্ক আঁশ ওঠার মতো হয়ে যেতে দেয় না। কিন্তু বেনজল পারঅক্সাইডের সঙ্গে ভিটামিন সি মেশালে ত্বকের কিন্তু কোনও উপকার হবে না। বরং ত্বকে বেনজল পারঅক্সাইড লাগালে ভিটামিন সি অক্সিডাইজ হয়ে যাবে, ফলে দুটি উপাদানের উপকারিতার মধ্যে কাটাকুটি হয়ে গিয়ে কোনও লাভই হবে না!
ভিটামিন সি+রেটিনল

রেটিনয়েডে অনেক অ্যান্টি-এজিং যৌগ থাকে যা মুখে সূক্ষ্ম রেখা আর বলিরেখা কমায়, ত্বকের কোলাজেন তৈরির ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু রেটিনলের সঙ্গে যদি ভিটামিন সি মিশিয়ে ফেলেন, তবে কিন্তু ত্বকের সর্বনাশ হতে বেশি সময় লাগবে না। ত্বক লাল হয়ে যাবে, জ্বালা করবে, আঁশের মতো পাতলা চামড়া উঠে আসবে। শুধু তাই নয়, এই দুটি উপাদান একসঙ্গে ব্যবহার করলে ত্বকে আলট্রা ভায়োলেট রশ্মিজনিত ক্ষতির ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। ফলে ভিটামিন সি মাখুন সকালের ত্বক পরিচর্যার সময়, আর রেটিনলের জন্য বরাদ্দ থাক রাতের ত্বক পরিচর্যার সময়টুকু।
ভিটামিন সি + এএইচএ/বিএইচএ

আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড (এএইচএ) এবং বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড (বিএইচএ) হল একধরনের রাসায়নিক এক্সফোলিয়েন্ট যা ত্বকের ভোল পালটে দিতে পারে রাতারাতি! এএইচএ ত্বকের উপরিভাগ মসৃণ করে তোলে, অন্যদিকে বিএইচএ রোমছিদ্রের গভীরে ঢুকে মৃত কোষ আর অতিরিক্ত সেবাম সাফ করে দেয়। আলফা হাইড্রক্সি, বিটা হাইড্রক্সি আর ভিটামিন সি, এই তিনটিই অ্যাসিড উপাদান। ফলে এএইচএ বা বিএইচএ মাখার পরেই ভিটামিন সি মাখলে ত্বকে জ্বালা করতে পারে। ফলে সকালে ভিটামিন সি মাখুন আর রাতে মাখুন এএইচএ/বিএইচবি। অথবা এক রাতে এএইচএ/বিএইচএ মাখুন আর পরের রাতে মাখুন ভিটামিন সি। এভাবে একরাত অন্তর এক একটা উপাদান ব্যবহার করুন।
ভিটামিন সি+নিয়াসিনামাইড

নিয়াসিনামাইড ভিটামিন বিথ্রি নামেও পরিচিত। এটি একটি জরুরি পুষ্টিকর উপাদান যা ত্বকে প্রোটিন তৈরিতে সাহায্য করে, ত্বকের অসমান রং ঠিক করে, প্রসারিত রোমছিদ্রকে সংকুচিত করে তোলে, সূক্ষ্মরেখা আর বলিরেখার প্রকোপ প্রতিরোধ করে ত্বকে এনে দেয় স্বাস্থ্যের উজ্জ্বল দীপ্তি। কিন্তু নিয়াসিনামাইড আর ভিটামিন সি একসঙ্গে বা পরপর মাখলে দুটি উপাদানই পরস্পরকে রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয় করে দেবে, ফলে ত্বকে কোনওটিই আর কাজ করবে না। নিয়াসিনামাইড ভিটামিন সি-এর গুণগুলিকে নষ্ট করে দেয় এবং সেই নষ্ট হয়ে যাওয়া ভিটামিন সি-এর কারণে ত্বকে লালচেভাব আর ব্রণ দেখা দিতে পারে।
Written by Manisha Dasgupta on May 14, 2021
Author at BeBeautiful.