টানা দীঘল ভুরু পাওয়ার ইচ্ছে মনে মনে লুকিয়ে রাখেন অনেক মেয়ে, আর তাতে কোনও ভুলও নেই। ঘন দীঘল ভুরু মুখে গভীরতা আর ডাইমেনশন এনে দেয়, মুখের ফ্রেম হিসেবে কাজ করে! কিন্তু দিনের পর দিন বারবার অতিরিক্ত ভুরু প্লাক, থ্রেড এমনকী ওয়্যাক্সিংয়ের কারণে ভুরুর রোমের ঘনত্ব কমে যেতে পারে, ভুরুর মধ্যে তৈরি হতে পারে শূন্যস্থান।
এ সব ফাঁকা অংশ ভরাট করার জন্য অসংখ্য ভালো মানের আইব্রো পেনসিল বা অন্যান্য প্রডাক্ট পাওয়া যায়। ভুরুর সমস্ত ফাঁকফোকর দারুণ সুন্দরভাবে ভরে দেয় এ সব প্রডাক্ট, এবং কিচ্ছুটি বোঝাও যায় না! কিন্তু তাও আমরা মনে মনে চাই মেকআপ ছাড়াই সুন্দর টানা টানা নিখুঁত ভুরু পেতে!
আপনার ভুরুও যদি জন্মসূত্রেই সরু বা পাতলা হয়, বা ভুরুর রোমের ঘনত্ব কমে গিয়ে থাকে, তা হলে জেনে নিন প্রাকৃতিক উপায়ে কীভাবে ভুরুর ঘনত্ব বাড়াবেন। আপনাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি স্বাভাবিক উপায়ে ভুরুর ঘনত্ব বাড়ানোর কিছু ঘরোয়া টোটকা যা আপনার ভুরুর চেহারা পালটে দেবে মাত্র কয়েক মাসে! এ সব প্রাকৃতিক উপায় সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং সত্যি সত্যিই দ্রুত কাজ করে।
কাজেই আপনাদের যে চিরকালের প্রশ্ন, 'কীভাবে ভুরুর ঘনত্ব বাড়াবেন?' তার উত্তরে রইল কিছু গবেষণা-লব্ধ প্রাকৃতিক সমাধানের সন্ধান।
1. ক্যাস্টর অয়েল

স্বাভাবিক ও কার্যকরী উপায়ে ভুরুর ঘনত্ব বাড়ানোর উপায়/ effective way to grow eyebrows হল ক্যাস্টর অয়েল। এতে প্রায় 90% রিসিনোলেইক অ্যাসিড রয়েছে যা চুলের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে/ promote hair growth। কিন্তু ক্যাস্টর অয়েল থেকে মাঝেমাঝে অ্যালার্জি হতে পারে, তাই ভুরুতে লাগানোর আগে প্যাচ টেস্ট অবশ্যই করে নেবেন। ভুরুতে কীভাবে ব্যবহার করবেন ক্যাস্টর অয়েল:
ধাপ 01: হাতের তালুতে কয়েক ফোঁটা ক্যাস্টর অয়েল নিয়ে আঙুলে ঘষে গরম করে নিন
ধাপ 02: এবার তেল ভুরুতে লাগিয়ে কয়েক মিনিট মাসাজ করুন।
ধাপ 03: আধ ঘণ্টা রাখুন, তারপর মেকআপ রিমুভার দিয়ে মুছে নিন। এর পর জল দিয়ে ধুয়ে নেবেন।
2. নারকেল তেল

ঘন ভুরু পাওয়ার উপায় বলতে যে সব নামগুলো মনে পড়ে, তার মধ্যে সবার ওপরদিকেই থাকবে নারকেল তেল। এই তেলে অত্যন্ত জরুরি পুষ্টিকর উপাদান, ভিটামিন আর ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা নির্জীব আর সুপ্ত হেয়ার ফলিকলগুলোকে নতুন করে সজীব করে তুলে চুলের বাড়বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে। নিয়মিত ভুরুতে নারকেল তেল দিয়ে মাসাজ করলে জায়গাটা আর্দ্র থাকবে এবং ভুরুর সূক্ষ্ম রোমের কোনও ক্ষতি হবে না।
ভুরুতে কীভাবে ব্যবহার করবেন নারকেল তেল:
ধাপ 01: খাঁটি অর্গানিক নারকেল তেলে তুলো ভিজিয়ে ভুরু ও তার আশপাশে লাগিয়ে নিন
ধাপ 02: ভুরুতে মাসাজ করে নিন কিছুক্ষণ, তারপর সারা রাত রেখে দিন
ধাপ 03: সকালে উঠে ঠান্ডা জল আর খুব কোমল সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন
3. অলিভ অয়েল

প্রাকৃতিক উপায়ে ভুরুর ঘনত্ব বাড়ানোর আর একটি দারুণ উপায় হল অলিভ অয়েল। অলিভ অয়েলের আর্দ্রতা আর পুষ্টির গুণ ভুরুকে সুস্থ রাখে, ভুরুর রোম ঝরে যেতে দেয় না। ফলে ভুরুর রোম ওঠে না, এবং ভুরু ঘন আর সুন্দর দেখায়। তা ছাড়া অলিভ অয়েলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই থাকে যা ভুরুর রোমের রঙ কালো রাখে, ফলে স্বাভাবিকভাবেই ভুরু ঘন দেখায়/ eyebrows appear thicker।
ভুরুতে কীভাবে ব্যবহার করবেন অলিভ অয়েল:
ধাপ 01: প্রতিদিন রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে মুখ ভালো করে ধুয়ে নিন
ধাপ 02: এক ফোঁটা অলিভ অয়েল আঙুলে নিয়ে ভুরু ও তার আশপাশের অংশে পাঁচ মিনিট মাসাজ করুন
ধাপ 03: সারা রাত রেখে দিন, পরদিন সকালে ধুয়ে ফেলুন
4. পেঁয়াজের রস

শুনে একটু কেমন কেমন লাগছে তো? কিন্তু জানেন কি, পেঁয়াজের রস চুল ওঠা বন্ধ করার একটি দারুণ উপায়/ remedy to stop hair loss, যা আপনার চুলের বৃদ্ধি জোরদার করে এবং চুল লম্বা আর মজবুত করে তোলে/ keep your hair long and strong। এই প্রাকৃতিক অথচ চড়া গন্ধওয়ালা টোটকাটি ভুরুর রোম ঘন করারও খুব কার্যকরী উপায়। পেঁয়াজের রসে প্রচুর সালফার, সেলেনিয়াম, মিনারেল, ভিটামিন বি আর সি রয়েছে, এদের প্রতিটিই ভুরুর রোমের ঘনত্ব বাড়িয়ে তোলে। কোলাজেনের পরিমাণ কম হওয়ার কারণে ভুরুর রোম ঝরে যায়। কিন্তু পেঁয়াজের রসের সালফার কোলাজেন নতুন করে তৈরি হতে সাহায্য করে এবং রোমের ফলিকলগুলোকেও মজবুত করে যাতে ভুরু ঘন আর কালো থাকে।
ভুরুতে কীভাবে ব্যবহার করবেন পেঁয়াজের রস:
ধাপ 01: একটা পেঁয়াজ কেটে টুকরোগুলো ব্লেন্ডারে দিয়ে দিন
ধাপ 02: পাতলা আদ্দির কাপড় বা ছাঁকনি দিয়ে পেঁয়াজের শাঁস আর রসটা আলাদা করে নিন
ধাপ 03: এবার পেঁয়াজের রসে পরিষ্কার তুলো ভিজিয়ে ভুরুতে লাগান
ধাপ 04: এক ঘণ্টা রেখে সাবান আর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন
5. ডিমের কুসুম

আমাদের চুল, এমনকী ভুরুর রোমও কেরাটিন নামের প্রোটিন দিয়ে তৈরি। এই কেরাটিন উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিলে চুল উঠতে থাকে, ভুরুও পাতলা হয়ে যায়। ডিমের কুসুমে বায়োটিন নামে একটি উপাদান রয়েছে যা চুলের পক্ষে উপকারী, ফলে ভুরুর রোম ঘন করতেও ডিমের কুসুম একটি কার্যকরী সমাধান। নিচে দেওয়া ট্রিটমেন্টটি সপ্তাহে দু' বার করে মাস দুয়েক মেনে চলুন, ভুরুর ঘনত্ব আর সৌন্দর্যে চোখে পড়ার মতো তফাত পাবেন। ভুরুতে কীভাবে ব্যবহার করবেন ডিমের কুসুম:
ধাপ 01: ডিমের সাদা অংশ থেকে কুসুম আলাদা করে নিন
ধাপ 02: কুসুম ভালো করে ফেটিয়ে নিন যাতে মসৃণ টেক্সচার আসে
ধাপ 03: পরিষ্কার কিউ-টিপ দিয়ে কুসুমটা ভুরুতে লাগান। তবে মনে রাখবেন ডিমের কুসুম কমেডোজেনিক হতে পারে, তাই মাঝেমধ্যে লাগান। বিশেষ করে ত্বকে ব্রণর সমস্যা/ acne prone skin থাকলে নিয়মিত লাগাবেন না
ধাপ 04: সবচেয়ে ভালো ফল পেতে 20 মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
6. পেট্রোলিয়াম জেলি

আমরা সকলেই পেট্রোলিয়াম জেলির পুষ্টিগুণ/ nourishing properties of petroleum jelly ও আর্দ্রতার গুণ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। এই সব গুণ আপনার ভুরুদুটিকেও স্বাভাবিকভাবে ঘন করে তোলে। ভুরুতে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগালে আর্দ্রভাব বজায় থাকে এবং ভুরু ঘন আর ভরাট দেখায়।
ভুরুতে কীভাবে ব্যবহার করবেন পেট্রোলিয়াম জেলি:
ধাপ 01: ভেসলিন অ্যালো ফ্রেশ পেট্রোলিয়াম জেলি/ Vaseline Aloe Fresh Petroleum Jelly ভুরুতে লাগিয়ে ভালো করে মাসাজ করুন
ধাপ 02: সারা রাত রেখে দিন, সকালে হালকা গরম জলে ধুয়ে ফেলুন ভুরু ঘন করা সম্পর্কে কিছু সাধারণ প্রশ্ন

প্র: ভুরুর রোমের ঘনত্ব বাড়াব কী করে?
উ: ওপরে বলা যে কোনও পদ্ধতি অনুসরণ করে ভুরুর রোমের ঘনত্ব বাড়াতে পারেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি হল প্রডাক্টটা ভুরুতে ও ভুরুর চারপাশে ভালোভাবে মাসাজ করতে হবে। একমাত্র তা হলেই আশানুরূপ ফল পাবেন এবং আপনার ভুরু দ্রুত ঘন হয়ে উঠবে।
প্র: ভুরুর রোম কি নতুন করে জন্মানো সম্ভব?
উ: অবশ্যই ভুরুর রোম নতুন করে জন্মাতে পারে। বহু বছর ধরে প্লাকিং, থ্রেডিং, ওয়্যাক্সিংয়ের ফলে ভুরুর রোমের বৃদ্ধি কমে যায়, ভুরু তার স্বাভাবিক শেপে থাকে না। কিন্তু কার্যকর প্রাকৃতিক সমাধান কাজে লাগিয়ে ভুরু নতুন করে ঘন আর ভরাট করে তোলা সম্ভব।
প্র: ভুরুর ফাঁক ভরাট করতে কী ব্যবহার করতে পারি?
উ: আইব্রো পেনসিল বা ব্রো পাউডার দিয়ে ভুরুর ফাঁক ভরতে পারেন। সম্পূর্ণ স্বাভাবিক দেখতে ভুরু পাবেন। ছোট ছোট রোমের মতো স্ট্রোকে ভুরু আঁকবেন, তাতে লুক একদম স্বাভাবিক থাকবে। ফোটো সৌজন্য: ইনস্টাগ্রাম
Written by Manisha Dasgupta on 12th Feb 2021