রূপচর্চার জগতে অনেক শব্দের অর্থই নতুন করে শেখার আছে| আর তার মধ্যে সবচেয়ে বিভ্রমজাগানো শব্দ দুটি হল ময়েশ্চারাইজ়িং আর হাইড্রেটিং| যদিও দুটি শব্দই আমাদের ত্বকের যত্ন আর পুষ্টির বিষয়ে আলোচনা করার সময়ে ব্যবহার করা হয়, এই দুটিকে অভিন্ন মনে করে গুলিয়ে ফেলা কিন্তু মোটেই উচিত নয়|
আর সেইজন্যই আমরা একটি সহজ সরল নির্দেশনামা তৈরি করেছি, যাতে এই দুটি শব্দের পার্থক্য বুঝতে সুবিধা হয় এবং আমরা সেই অর্থ অনুধাবন করে সেইমতো সম্পূর্ণ সুফল পেতে পারি|
শুষ্ক অর্থাৎ ড্রাই বনাম ডিহাইড্রেটেড ত্বক...পার্থক্য কোথায় ?
অবশ্যই দুটির মধ্যে ফারাক আছে| ‘ডিহাইড্রেটেড’ কথাটির অর্থ জলের অভাব| আর ‘ড্রাই’ শব্দটির অর্থ তৈলাক্ত বস্তুর অভাব| সুতরাং ‘ডিহাইড্রেটেড’ ত্বকের প্রয়োজন হল জল (কারণ এতে জলের পরিমাণ কম) আর ‘ড্রাই’ ত্বকের চাই ময়েশ্চারাইজ়িং (কারণ এটি পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈলাক্ত নয়)|
হাইড্রেটিং ত্বকে ভেজা ভাব যোগ করে

ত্বকের সৌন্দর্যরক্ষায় কোরিয়া আমাদের একটি জিনিস অবশ্যই শিখিয়েছে। সেটি হল স্বাস্থ্যকর আর উজ্জ্বল ত্বকের জন্য ত্বকে ঠিকঠাক জলের পরিমাণ বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি|
হাইড্রেশন, অর্থাৎ ত্বকে জলের পরিমাণ| আর হাইড্রেটর হল সেই সব বস্তু, যা বিশেষ ফর্মুলা মেনে বিশেষ উপাদান দিয়ে তৈরি, যাতে এটি ব্যবহার করলে ত্বকে জলের পরিমাণ বাড়ে|
আর এই বিশেষ বিশেষ উপাদান কী কী? হিউমেকট্যান্টস| হিউমেকট্যান্ট পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে আর্দ্রতা শুষে নিয়ে তা পৌঁছে দেয় আমাদের ত্বকের বিভিন্ন স্তরগুলিতে| ফলে ত্বকে জলের পরিমাণ সুষম থাকে| গ্লিসারিন আর মধু এই হিউমেকট্যান্ট-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ|
সুতরাং ত্বক যে পরিমাণে জল হারিয়েছে, হাইড্রেশন সেই জল পুরোটাই পূরণ করে দেয় এবং তার সঙ্গে বাড়তি জলও কিছু মজুত রাখে|
সুতরাং ত্বকে জলের পরিমাণ বাড়াতে রোজকার জীবনে ব্যবহার করুন হাইড্রেটর আর জলপান করুন পর্যাপ্ত পরিমাণে| রোজ নিয়মিত জলভিত্তিক ক্রিম ব্যবহার করুন, যেমন ল্যাকমে অ্যাবসোলিউট স্কিন গ্লস জেল ক্রিম, এটি আপনার ত্বকের গভীর পর্যন্ত জলের পরিমাপ বজায় রাখে এবং দিনভর আপনার ত্বককে রাখে আর্দ্র। এর ফলে আপনার ত্বকে যে ঠিকঠাক আর্দ্রতাজনিত ভারসাম্য ফিরে আসবে, তাই নয়, এটি আপনার ময়েশ্চারাইজ়ারের কার্যক্ষমতাও বৃদ্ধি করবে|
ময়েশ্চারাইজ়িং আপনার ত্বকে সিক্তভাব ধরে রাখে

হাইড্রেশন আপনার ত্বকের পক্ষে এক গ্লাস জলের মতো| আপনার ত্বক দিনে কত গ্লাস জল পান করবে, তাতে কিছুই এসে যায় না| কারণ আসল জরুরি বিষয় হল এই জলকে যদি ত্বকে ধরে রাখা না যায়, তাহলে এটি বাষ্প হয়ে উড়ে যাবে এবং আপনার ত্বক হয়ে উঠবে শুষ্ক|
তখনই ময়েশ্চারাইজ়িং খুব জরুরি | এই ময়েশ্চারাইজ়িং ত্বকের ওপরে একটি প্রতিরোধী বর্ম বা বাধার আস্তরণ তৈরি করে, যেটি জলকে বাষ্পীভূত হয়ে যেতে দেয় না এবং এটির ব্যবহার ত্বকে উপস্থিত সিক্তভাব ঠিকঠাক বজায় রাখে| ত্বকের পৃষ্ঠতলে এটি সুরক্ষার সিলমোহর বলা যেতে পারে, কারণ ময়েশ্চারাইজ়ারের কাজ হল সারা দিন ধরে ত্বক থেকে জলের বাষ্পীভবন রোধ করা |
সুতরাং ময়েশ্চারাইজ়িং এক আপসহীন দৈনন্দিন পদ্ধতি, এমনকী আপনার ত্বক তৈলাক্ত হলেও| তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বেছে নিন জেলভিত্তিক ময়েশ্চারাইজ়ার, কিন্তু শুষ্ক ত্বকের জন্য চাই এমন কিছু, যা গভীরভাবে হাইড্রেট করতে সক্ষম, যেমন ল্যাকমে অ্যাবসোলিউট আরগান অয়েল রেডিয়ান্স অয়েল-ইন-ক্রিম| আর যদি আপনার ত্বক হয় এই দু’ধরনের ত্বকের সংমিশ্রণ, তাহলে কিন্তু দুটি ক্রিমের মিশ্রণ ব্যবহার করতে হবে|
সংক্ষেপে বলতে গেলে...
হাইড্রেটিং হল জলীয় সিক্ততাকে ঝরনার মতো ত্বকের গভীরে বহমান করে ব্যবহার করা, আর ময়েশ্চারাইজ়িং হল সেই সিক্ততাকে ত্বকে বন্দি করে রাখা, যাতে তা বাষ্পীভূত না হতে পারে|
আপনার ত্বকের কী চাই...
কিন্তু আপনি প্রশ্ন তুলতেই পারেন, ময়েশ্চারাইজ়ার আর হাইড্রেটর... দুইই আমাদের ত্বকে আর্দ্রতা দেয় কিনা| আমরা বুঝবই বা কী করে, দুটির মধ্যে কোনটি আমাদের ত্বকের চাই!
উত্তর হল, দুটিই জরুরি|
যে ত্বকে জলের পরিমাণ কম, অর্থাৎ যে ত্বক ডিহাইড্রেটেড, তাতে ময়েশ্চারাইজ়ার লাগালেও কিন্তু তা প্রাণহীন আর হালকা লাগবে নিজের কাছে, কারণ এটি পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পাচ্ছে না| আর যে শুষ্ক ত্বক হাইড্রেটেড, কিন্তু ময়েশ্চারাইজ়ার ব্যবহার করা হয়নি, তাতে খড়ি বা মরামাস উঠবে আর দেখতেও লাগবে খসখসে| সুতরাং আপনার হাইড্রেটর আর ময়েশ্চারাইজ়ার, দুটিই চাই অথবা এমন কিছু যা এই দুটির মিশ্রণ|
আর এই হল সার কথা!
সুতরাং হাইড্রেটর আর ময়েশ্চারাইজ়ার ‘প্রতিশব্দ’ নয় যে প্রসাধনী সংস্থাগুলি যা খুশি তাই লিখে আপনাকে বোকা বানাতে পারে, অথবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিস আপনাকে দিয়ে কেনাতে পারে| এই দুটি বস্তুর আলাদা আলাদা অস্তিত্বের উদ্দেশ্য আছে| এরা একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করে আপনার ত্বককে রাখে স্বাস্থ্যে ভরপুর আর খুশিয়াল|
Written by Ishani Roychoudhuri on 30th Sep 2018