ত্বকের কিছু না কিছু সমস্যা সারা বছর লেগেই থাকে! ব্রণ হোক বা পিগমেন্টেশন, ত্বকের সমস্যা সারানোর একমাত্র পথ হল সমস্যার গোড়ায় পৌঁছনো। সেটা না করে এটা ওটা টোটকা দিয়ে চিকিৎসা করতে গেলে ত্বকের ভালোর বদলে খারাপও হয়ে যেতে পারে! তেমনটা নিশ্চয়ই আপনি চান না? মুখের কালো দাগের বেলাতেও একই কথা বলা যায়। বহু মেয়ে এই সমস্যায় ভোগেন। মুখের কালো দাগছোপের সমস্যার মোকাবিলা কীভাবে ঠিকমতো সামাল দেওয়া সম্ভব জানতে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম ইসায়া এসথেটিক্স/ Isya Aesthetics -এর সেলিব্রিটি স্কিন ও ওয়েলনেস বিশেষজ্ঞ এমডি ডক্টর কিরণ শেঠি/ Dr Kiran Sethi -র সঙ্গে।
মুখে কালো দাগছোপ থাকলে কীভাবে তা সামাল দেবেন এবং কী কী উপাদান ব্যবহার করে হালকা করতে পারবেন সে সব দাগ, তা নিয়ে আমাদের জানিয়েছেন ডক্টর শেঠি। জেনে নিন আপনিও!

ডক্টর কিরণ শেঠি / Dr Kiran Sethi -র মতে, অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক, দু'রকম কারণেই মুখে কালো দাগছোপ পড়তে পারে। "বাহ্যিক কারণের কথা বিবেচনা করলে কালো দাগের অন্যতম কারণ হল রোদজনিত ক্ষতি । এর ফলে মুখে ছিট ছিট কালো দাগ (ফ্রেকলস) পড়ে যায়। অভ্যন্তরীণ কারণে কালো দাগ পড়ে প্রদাহজনিত কারণে। ব্রণ হলে বা ক্ষত হলে অথবা পুড়ে গেলে কালো দাগ থেকে যায়। তা ছাড়া লিচেন প্লেনাসের মতো কিছু রোগের কারণেও পিগমেন্টেশন (এটিও আসলে প্রদাহ) দেখা দেয়," বলছেন কিরণ।
তবে কালো দাগছোপের হাত থেকে বাঁচার উপায় আছে। কিরণ বলছেন, কালো দাগের মোকাবিলা করা খুব কঠিন নয়, "পিগমেন্টেশন ত্বকের কতটা গভীরে, তার ওপরে নির্ভর করে কত তাড়াতাড়ি দাগ সারবে। দাগ যত ওপর ওপর থাকবে, তা সারানোও তত সহজ। কিন্তু দাগ যদি গভীরে হয়, যদি ডার্মিস পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তা হলে তা সারানো কঠিন। দাগের গভীরতার ওপর নির্ভর করে লেসার, পিলস বা মাইক্রোডার্মাব্রেশন ট্রিটমেন্ট বা ক্রিম দিয়ে দাগ নির্মূল করা সম্ভব।"
মুখের কালো দাগছোপ নিয়ে যাঁরা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন, এ খবর তাঁদের নিশ্চিতভাবেও আশা জোগাবে!
কালো দাগ নির্মূল করার কিছু মূল উপাদান:

01. আলফা-আরবুটিন - বিয়ারবেরি, ক্র্যানবেরি, ব্লুবেরি, গম ও নাসপাতিতে এই প্রাকৃতিক উপাদানটি থাকে। আলফা-আরবুটিন থেকে খুব ধীরে হাইড্রোকুইনোয়ান নির্গত হয় এবং সৌন্দর্যের জগতে এটিকে ত্বকের রং উজ্জ্বল করে তোলার অন্যতম শক্তিশালী উপাদান হিসেবে মনে করা হয়। যে হেতু এই উপাদানটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক, তাই দাগছোপের মোকাবিলা করায় এটিকে অনেক বেশি নিরাপদ বলেও মনে করা হয়।
02. ভিটামিন সি - মুখের কালো দাগ কমাতে ভিটামিন সি-র চেয়ে ভালো আর কিছু নেই! এটি কোমল রাসায়নিক এক্সফোলিয়েন্ট এবং ত্বকের সুরক্ষা বলয় নষ্ট না করেই বিবর্ণ মৃত কোষের স্তর কোমলভাবে তুলে দিতে পারে। তার সঙ্গে বাড়তি লাভ হল ভিটামিন সি-র অ্যান্টি অক্সিডান্টের গুণ। ত্বকের ক্ষতিগ্রস্ত কোষ সরিয়ে নতুন কোষের জন্মে সাহায্য করে ভিটামিন সি, সেই সঙ্গে ফ্রি র্যাডিক্যাল জনিত ক্ষতির মোকাবিলাও করে।
03. কোজিক অ্যাসিড - বয়সজনিত কারণে মুখে কালো দাগছোপ পড়ে থাকলে তার মোকাবিলা করতে দারুণ কাজ দেয় কোজিক অ্যাসিড। মেলাসমা, অর্থাৎ গর্ভাবস্থায় ত্বক কালো হয়ে গেলে তার চিকিৎসাতেও এই উপাদানটি খুবই ফলপ্রসূ।
04. লাইকোরাইস নির্যাস - লাইকোরাইস হল আর একটি উদ্ভিজ্জ উপাদান, যা ত্বকের পক্ষে খুবই উপকারী। লাইকোরাইসের নির্যাস নানা কাজে লাগে। এটি মুখের কালো দাগ তো হালকা করেই, উপরন্তু নতুন দাগ হওয়াও আটকে দেয়। লাইকোরাইস টাইরোসিনেসের উৎপাদন কমিয়ে দেয় যা মুখে কালো দাগ হওয়ার জন্য দায়ী। এ ছাড়া লাইকোরাইস অতিরিক্ত মেলানিনও তৈরি হতে দেয় না, এবং আপনার ত্বক করে তোলে উজ্জ্বল আর ঝলমলে।
05. রেটিনল - ত্বকের নানাবিধ সমস্যা সমাধানে কাজে লাগে রেটিনল। মুখের কালো দাগ হালকা করতেও রেটিনলের ভূমিকা রয়েছে। ত্বকে নতুন কোষ জন্মাতে সাহায্য করে রেটিনল, সেই সঙ্গে কোলাজেন উৎপাদনও বাড়িয়ে দেয়। ফলে ত্বক থাকে টানটান আর ঝকঝকে।
06. এএইচএ - অর্থার আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড। জলে দ্রাব্য এই যৌগ তৈরি হয় মিষ্টি ফল থেকে। ত্বকের একেবারে ওপরের স্তরটা তুলে দিয়ে কালো দাগছোপ হালকা করে দেয় এই অ্যাসিড, বদলে নতুন মসৃণ ত্বকের জন্ম দেয়।
মুখের কালো দাগ তোলার সময় কী কী ভুল করবেন না

মুখের কালো দাগ তোলার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে বলেছেন ডক্টর কিরণ। "অনেক সময় দাগ তুলতে গিয়ে আমরা বাড়াবাড়ি করে ফেলি। অতিরিক্ত ক্রিম মাখলে তা থেকে মুখে জ্বালা হতে পারে, তাতে দাগ আরও গাঢ় হয়ে যেতে পারে। ঠিকভাবে পরিচর্যা করুন, মুখের দাগ চলে যাবে। পাশাপাশি, মুখে কেন কালো দাগ পড়ছে, সেটা জানাও খুব দরকার। অনেকে মনে করেন সব দাগই এক! আসলে কিন্তু তা নয়! দাগের কারণ আর ধরনের ওপর নির্ভর করে আলাদারকম ট্রিটমেন্ট আর পরিচর্যার দরকার হয়। সমস্যার কারণ খুঁজুন, তারপর সঠিক পরামর্শ মেনে তার চিকিৎসা করুন, দাগ চলে যাবে।"
Written by Manisha Dasgupta on 15th Oct 2020