ত্বক পরিচর্যার জগতে ত্বকের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং আর কঠিন সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হল ব্রণর গর্ত গর্ত হয়ে যাওয়া দাগ। প্রচণ্ড ব্রণ হওয়ার পর সে সব শুকিয়ে গেলে মুখে গর্ত হয়ে দাগ থেকে যায়। মেকআপ দিয়ে সে সব দাগ সাময়িকভাবে ঢেকে দেওয়া গেলেও তা মুখে স্থায়ী হয়ে বসে যাওয়ার আগেই চিকিৎসা দরকার।
ব্রণর গর্তের নানা ধরন হয়। কোন দাগ কেমন দেখতে তার ওপর নির্ভর করে দাগের ধরন। দেখে নেওয়া যাক:
আইস পিক স্কার- ব্রণর এই গর্তগুলি খুব গভীর, ছোট ফুটোর মতো দেখতে এবং ত্বকের গভীরে বসে যায়।
রোলিং স্কার- এই গর্ত খুব গভীর নয়, কিন্তু এই ব্রণর ধারগুলো ত্বকের সঙ্গে মিশে গিয়ে ত্বক অসমান দেখায়।
বক্স স্কার- চওড়া, বৃত্তাকার বা বাক্সের মতো দেখতে এবং ধারগুলো ত্বকের ওপরে ফুটে থাকে, অনেকটা রোলিং স্কারের মতোই।
- ব্রণর গর্ত কেন হয়?
- ব্রণর গর্ত থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় কী:
- মাইক্রো-নিডলিং
- কেমিক্যাল পিল
- কোমল এক্সফোলিয়েশন
- ভিটামিন সি
ব্রণর গর্ত কেন হয়?

ব্রণর গর্তকে অ্যাট্রফিক অ্যাকনে স্কারও বলা হয়। ব্রণর জায়গায় নতুন করে কোলাজেন তৈরি না হলে আর প্রদাহের কারণে ব্রণর ক্ষতর নিরাময় সম্পূর্ণ এলোমেলো হয়ে যায় আর সেই জন্যই ত্বকে গর্ত হয়ে যায়। ত্বকে যে কোনও ক্ষত হলেই তা সারিয়ে তুলতে কোলাজেন আর টিস্যুর উৎপাদন দরকার, ব্রণ সেরে ওঠার পদ্ধতিও একই। তাই ব্রণ খোঁটাখুঁটি করলে বা চাপ দিলে ব্রণ বেড়ে যায় এবং তার ফলে ত্বকে কোলাজেন উৎপাদন খুব কমে যায়। আর সে কারণেই তৈরি হয় গভীর বা অগভীর গর্ত।
ব্রণর গর্ত থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় কী:

রেটিনয়েড স্কিনকেয়ারের জগতে জনপ্রিয় উপাদান হল রেটিনয়েড। ব্রণ বা ব্রণর দাগ কমাতে এটি খুবই উপযোগী উপাদান। ভিটামিন এ থেকে এই উপাদানটি পাওয়া যায়, রেটিনয়েড-জাত সমস্ত স্কিনকেয়ার প্রডাক্টই এর অন্তর্গত। এই উপাদানটি কোষের স্তরে গিয়ে দ্রুত কোষের জন্ম ঘটায়, কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায় এবং প্রদাহ কমায়। এর ফলে ব্রণর গর্ত বা ব্রণ শুকিয়ে যাওয়ার পরেও ত্বকের ওপর অসমান উঁচুভাব থাকে না।
মাইক্রো-নিডলিং

নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, এই পদ্ধতিতে ত্বকের গভীরে ছোট ছোট পিনের মতো সূচ ঢোকানো হয়। শুনে রীতিমতো ভয় লাগলেও এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ নিরাপদ। এই কাজের জন্য বিশেষভাবে তৈরি মাইক্রোনিডল যন্ত্র আছে। তবে আপনি যদি পেশাদারের উপস্থিতিতে ব্রণর ক্ষত নিরাময় করতে চান, তা হলে মাইক্রো-নিডলিং ট্রিটমেন্টের জন্য আপনার ডার্মাটোলজিস্টের সঙ্গে কথা বলুন। এই পদ্ধতিতে মাইক্রোনিডল দিয়ে ত্বকে যে যান্ত্রিক ক্ষত সৃষ্টি করা হয় তার প্রতিক্রিয়ায় কোলাজেন উৎপাদন বেড়ে যায়।
কেমিক্যাল পিল

বাড়ির বদলে ত্বক বিশেষজ্ঞের ক্লিনিকেই কেমিক্যাল পিল করা সহজ এবং নিরাপদ। এই পদ্ধতিতে ত্বকে একটি রাসায়নিক সলিউশন লাগিয়ে তুলে ফেলা হয়, যার ফলে ত্বকের এক্সফোলিয়েশন হয় এবং ক্ষতিগ্রস্ত মৃত ত্বক উঠে গিয়ে ভেতরের তরতাজা নতুন ত্বক বেরিয়ে আসে। কেমিক্যাল পিল করালে ব্রণর গর্ত অনেকটাই কমে যায়। এই পিলে সাধারণত যে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় তা হল স্যালিসাইলিক আর গ্লাইকোলিক অ্যাসিড।
কোমল এক্সফোলিয়েশন

যদিও এক্সফোলিয়েশন করলে ব্রণর গর্ত একেবারে উধাও হয়ে যাবে না, তবু ব্রণর উৎপাত কমাতে আর গর্ত হওয়ার আশঙ্কা কমাতে এক্সফোলিয়েশন সাহায্য করতে পারে। স্যালিসাইলিক অ্যাসিড যুক্ত ফরমুলা ব্যবহার করুন, যা আপনার রোমছিদ্রের গভীরে গিয়ে জমে থাকা ধুলোময়লা আর সেবাম পরিষ্কার করতে পারে। ডার্মালজিকা ডেইলি মাইক্রোফোলিয়েন্ট এক্সফোলিয়েন্ট/ Dermalogica Daily Microfoliant Exfoliant ব্যবহার করতে পারেন, এটি মৃত কোষ ঘষে সাফ করে দেয় এবং রোমছিদ্রের মুখ খুলে ভিতরের মসৃণ আর উজ্জ্বল ত্বক বের করে আনে। স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ছাড়াও এতে রয়েছে মাইক্রোফোলিয়েটিং রাইস এক্সট্রাক্ট, পাপাইন এনজাইম, অ্যালানটয়েন আর লাইকোরাইস, যার প্রতিটিই ত্বকের পক্ষে খুব উপকারী।
ভিটামিন সি

ত্বকের যত্নে সকলেরই ভিটামিন সি পছন্দ। নিয়মিত ভিটামিন সি ব্যবহার করলে ব্রণর দাগ ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যাবে। অ্যাসকরবিক অ্যাসিড নামেও পরিচিত এই উপাদানটি ত্বকে কোলাজেন উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারে, ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক সারিয়ে তুলতে পারে এবং প্রদাহ-পরবর্তী ব্রণর দাগ আর ক্ষতচিহ্ন হালকা করে দিতে পারে, ফলে ত্বক মসৃণ হয়ে ওঠে। এ ব্যাপারে আমাদের সবচেয়ে পছন্দ ল্যাকমে ভিটামিন সি+ফেসিয়াল সিরাম Lakmé Vitamin C+ Facial Serum কাকাডু প্লামের নির্যাস রয়েছে এতে, যা এখনও পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীতে ভিটামিন সি-র সবচেয়ে বড় উৎস। আশ্চর্য এই সিরামটিতে ভিটামিন সি-র শক্তি রয়েছে যা নিয়মিত ব্যবহারে আপনার ত্বকের টেক্সচারের লক্ষণীয় উন্নতি হবে।
Written by Manisha Dasgupta on 17th Sep 2021